কুষ্টিয়ায় আন্দোলনকারীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় কাউন্সিলরসহ ৬ আ’লীগ নেতার জামিন - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ায় আন্দোলনকারীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় কাউন্সিলরসহ ৬ আ’লীগ নেতার জামিন

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ায় আন্দোলকারী তামজিদ হোসেন জনিকে (২৬) হত্যাচেষ্টা মামলায় গত বৃহস্পতিবার আ.লীগের নেতা তিনজন কাউন্সিলরকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গতকাল রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) তাদের তিনজন সহ মোট ৬ আসামিকে জামিন দেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালত। তাদের জামিন বাতিল ও বিচারককে প্রত্যাহারের দাবিতে দুপুরের দিকে বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন করেছেন ছাত্রজনতা।

জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সামনে বিক্ষোভে ছাত্র, জনতা, বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী সহ তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। জামিন পাওয়া তিন কাউন্সিলর হলেন- কুষ্টিয়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল হক মুরাদ, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম নজু ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছ কোরাইশী। তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়ার অন্যতম সমন্বয়ক তৌকির আহমেদ বলেন, জীবন ও রক্তের বিনিময়ে আমরা ছাত্রজনতা দেশটাকে নতুনভাবে স্বাধীন করেছি।

আন্দোলনকারীকে হত্যা চেষ্টা মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা, পৌরসভার কাউন্সিলর সহ ৬ জনকে জামিন দেয়া হয়েছে। আদের জামিন বাতিল, বিচারক মাহমুদা সুলতানাকে প্রত্যাহার, আন্দোলনে হত্যা এবং হত্যা চেষ্টা মামলার সকল আসামির শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আন্দোলনকারীকে হত্যা চেষ্টা মামলায় তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে জামিন দেওয়াই তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচির ডাক দিবো। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আন্দোলনকারীকে হত্যা চেষ্টা মামলায় ভাই আসামিকে জামিন দিয়েছে আওয়ামী লীগের পরিবারের বিচারক মাহমুদা সুলতানা। আওয়ামী লীগের খুনিদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে।

আন্দোলনকারীকে হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তারের দুইদিন পরে তিন কাউন্সিলরকে জামিন দিয়েছে। এছাড়া ছয় আসামিকে জামিন দিয়েছে তিনি। তাকে দ্রুত প্রত্যাহার করা হোক। জামিনের ঘটনা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে কুষ্টিয়ায় আন্দোলনকারীদের হত্যা ও হত্যা চেষ্টা মামলার সকল আসামিদের জামিন বাতিল করতে হবে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি মানা না হলে আগামীতে আমরা কঠোর কর্মসূচি পালন করব। এবিষয়ে কথা বলার জন্য আদালত পুলিশের ইন্সপেক্টর  জহুরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

তবে বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালত সূত্র জানিয়েছেন, তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়াই মানববন্ধন সমাপ্ত করে আদালত ছেড়ে চলে গেছে ছাত্র জনতা।  প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এলোপাতাড়ি মারপিট ও গুলি করে তামজিদ হোসেন জনি (২৬) নামে এক আন্দোলনকারীকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। মামলায় কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফকে নির্দেশদাতা আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০/৪৫ জনকে। গ্রেপ্তার কাউন্সিলররা এই মামলার আসামি।

গত বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কুমারখালী উপজেলার ঘোরাই গ্রামের লুৎফুর রহমানের ছেলে জিলহজ বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন। মামলার বাদী জিলহজ এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বার্মিজ গলি এলাকায় আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করার সময় সাবেক এমপি হানিফের নির্দেশে আসামীরা আমার ছোট ভাই তামজিদ হোসেন জনিকে ধাওয়া করে এবং তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করতে থাকে। তাদের ছোঁড়া গুলি তার বাম পায়ে বিদ্ধ হই।

আসামীরা হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরে লোহার রড, লাঠি দিয়ে বিভিন্নস্থানে এলোপাতাড়ী ভাবে মারপিট করিয়া গুরুত্বর জখম করে। ঘটনাস্থলে থেকে তাকে চিকিৎসা জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়। এরপর তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ও পরিবারের সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে এজাহার দায়ের করিতে বিলম্ব হয়েছে। কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০-৪৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।