নির্ধারিত সময়ের আরো অতিরিক্ত সাড়ে ১১ মাস পরেও সেতু নির্মাণ কাজের বাকী প্রায় ২০ ভাগ। চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে জরাজীর্ণ বিকল্প কাঁচা সড়ক। সেই সড়ক জুড়েও চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। সরু সড়কে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানযট। ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।

নিত্যদিন জনদুর্ভোগের এমন চিত্র কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলাধীন লালনবাজার – পান্টি সড়কের ঐতিহ্যবাহী পান্টি বাজার এলাকায় ডাকুয়া নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুতে।স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কচ্ছপ গতিতে চলছে সেতুর কাজ। জরাজীর্ণ বিকল্প কাঁচা সড়কের দুইপাশে স্থানীয়রা দোকান বসিয়েছে। রাখা হয়েছে সেতুর নির্মাণ সামগ্রী। একটু বৃষ্টি হলেই আর চলা যায়না। প্রায় যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটে। তবুও নিত্য প্রয়োজন মেটাতে চরম ঝুঁকি ও ভোগান্তি মাথায় নিয়ে চলাচল করছে মানুষ ও যানবাহন।
আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্ধারিত সময়েও সেতু নির্মাণ না হওয়ায় মুখ থুবরে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যবসা বাণিজ্য। জনদুর্ভোগ নিরসনে দ্রুত সেতুর বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি আগামী তিন – চার মাসের মধ্যেই সেতুর কাজ শেষ করা হবে।এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, ডাকুয়া নদীর দুইপার ঘেষে ঐতিহ্যবাহী পান্টি বাজার। উপজেলার দ্বিতীয় শহর বলা হয় পান্টিকে। উপজেলার চাদপুর, বাগুলাট, পান্টি ও যদুবয়রা ইউনিয়নের প্রায় লাখো মানুষ চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার একাংশ কুষ্টিয়া শহরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এই সড়ক দিয়ে।
প্রায় দেড় বছর আগে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পুরাতন সেতুটি ভেঙে নতুন সেতুর কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদার। উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, পান্টি বাজার এলাকায় ডাকুয়া নদীর ওপর প্রায় ৮১ মিটার পিএসসি গার্ডার সেতুর অনুমোদন দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর। যার চুক্তিমূল্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি ৭২ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা। কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার ত্রিমোহনীর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রুমানা – জে – ভি। চুক্তি অনুয়ায়ী ২০২১ সালের ১৭ আগষ্ট কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর শেষ করার কথা। কিন্তু পুরাতন সেতুটি অপসারণ, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধিসহ নানান অজুহাতে ঠিকাদার সময়মত কাজ শুরু করেনি।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ডাকুয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। নির্মাণাধীন সেতুর পশ্চিমপাশে জরাজীর্ণ মাটির বিকল্প সড়ক রয়েছে। সড়কের দুই পাশে কাঁচামাল ও মাছের দোকান দিয়েছেন স্থানীয়রা। পাশেই রাখা রড ও পাথর। সৃষ্টি হয়েছে যানযট। মানুষ পাঁয়ে হেটে ও বিভিন্ন যানবহনে চলাচল করছেন। এসময় ভ্যানচালক জলিল বিশ্বাস জানান, একেতে ভাঙা সড়ক। তারপরে আবার দুইপাশে দোকানপাট। মিনিটে মিনিটে বাঁধে জ্যাম। জনগণের ভোগান্তি দেখার লোক নেই। সেতু এলাকার কসমেটিক্স দোকানি মো. পলাশ হোসেন জানান, কচ্ছপ গতিতে চলছে কাজ। দেড় বছরেও সেতু নির্মাণ হয়নি। মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বাজারের ব্যবসা – বাণিজ্য মন্দা। বাজারের হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী মো. পল্লব হোসেন বলেন, সড়ক না থাকায় মালবাহী ট্রাক চলাচল করতে পারছেনা। প্রায়ই যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি দ্রুত সেতু বাস্তবায়নের দাবি জানান।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন শিক্ষার্থী জানান, সেতু এলাকায় যানযট লেগেই থাকে। বৃষ্টি হলে কাঁদা – পানি জমে। তখন অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। এসব দেখার কেউ নাই বলে মন্তব্য করেন তিনি। সড়কের কাঁচামাল বিক্রেতা মিরাজ শেখ জানান, অন্যদের দেখে তিনিও সড়ক জুড়ে ব্যবসা করেন প্রতিদিনই। সড়ক জরাজীর্ণ হওয়ায় সব সময় জ্যাম লেগে থাকে। কাজের হেড মিস্ত্রি আকবর মণ্ডল জানান, আজ ১৪ জন শ্রমিক মিলে সেতুর দুই নম্বর গার্ডারে স্লাপ বসানোর কাজ চলছে। এরপর তিন নম্বর গার্ডারের কাজ শুরু করা হবে। জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. স্বপন আলী জানান, নানাবিধ কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছিল। তবে এখন পুরোদমে কাজ চলছে। আগামী তিন – চার মাসের মধ্যে কাজ করবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন। উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম জানান, প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বারবার চাপ দিচ্ছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, আগামী দুই – তিন মাসের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করা হবে।উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত জানান, ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে দ্রুত কাজ শেষ ও জনদুর্ভোগ নিরোসনে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
