কুমারখালী-ইবি রুটে বাস চালুর দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি প্রদান - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুমারখালী-ইবি রুটে বাস চালুর দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি প্রদান 

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪

মিজানুর রহমান নয়ন ॥ আমার বাবা নেই। মা হোটেলে কাজ করে। বিভিন্ন জনের আর্থিক সহযোগীতায় ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়েছি। এখন টিউশনি করে পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছি। বাড়ি থেকে ইজিবাইক করে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে যাওয়া আসি করি। এতে প্রতিদিন ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা খরচ। আবার অনেক সময় ক্লাস মিস হয়ে যায়। অথচ প্রতি পরীক্ষায় ৯০০ টাকা বাস সার্ভিস পরিশোধ করা লাগে। তবে বাস চললে মাসে প্রায় দুই – তিন হাজার টাকা বেঁচে যেত। গতকাল রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আক্ষেপ করে কথা গুলো বলছিলেন শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান সোহান। তিনি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র এবং কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে।

২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রাকিব জোর্য়াদ্দার বলেন, শরীর নিয়ে চলাফেরা সমস্যা। হোস্টেলে বা মেসে থাকাও সমস্যা। বাস চললে খুবই উপকার হতো। খরচও বাঁচত। তাঁর ভাষ্য, পাশ্ববর্তি শৈলকুপা উপজেলায় যদি বাস চলাচল করে। তাহলে কুমারখালী থেকে কেন নয়? এটা যৌক্তিক দাবি। এদিকে ক্যাম্পাস থেকে কুমারখালী পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়ে রোববার সকালে উপাচারে‌্যর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুনির হোসেনের ,মৃত্যুর পর থেকে এ দাবি তোলেন তারা।

স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী-খোকসা অঞ্চল থেকে প্রায় ১৫০-২০০ জন শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করে এবং তাদের অধিকাংশই মেয়ে শিক্ষার্থী। প্রতিমাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত বাবদ আমাদের অতিরিক্ত তিন থেকে চার হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। এছাড়া ভাড়া গাড়িতে চলার ক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষার্থীকেই অর্থনৈতিকসহ নানারকম হয়রানির শিকার হতে হয়। সম্প্রতি ২৬ সেপ্টেম্বর আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুনির হোসেন ক্যাম্পাস থেকে সিএনজি যোগে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। প্রতিনিয়তই অনেক শিক্ষার্থী ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে।  তারা আরো বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সার্ভিসের ফি পরিশোধ করার পরও বাস সার্ভিস থেকে বঞ্চিত রয়েছি।

আমাদের যাতায়াত সমস্যার কারণে অনেক সময় বিলম্বে পৌঁছাতে হয়। পরীক্ষার সময় এ ধরণের বিলম্বের কারণে আমাদের অনেক বড় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কিন্তু আমরা যারা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান, তাদের পক্ষে নিয়মিত অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করা অথবা মেসে থেকে পড়াশোনার খরচ বহন করা উভয়ই বেশ কষ্টসাধ্য। প্রতিনিয়ত আমাদেরকে অটো, ভ্যান ইত্যাদি যানবাহনের মাধ্যমে যাতায়াত করতে হয় যা আমাদের জন্য ব্যয়বহুল। তাই আমাদের এলাকার শিক্ষার্থীদের স্বার্থে ক্যাম্পাস-পান্টি-কুমারখালী রুটে বাস সার্ভিস চালু করার দাবি জানাই। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী চায়না খাতুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস শিডিউলে কুমারখালি পর্যন্ত বাস দেওয়ার দাবি জানাই। সেই সঙ্গে রাস্তা সংস্কারের দাবি জানাই। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর প্রাণ এভাবে ঝরে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে হলেও এটির বাস্তবায়ন দেখতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কুলসুম খাতুন বলেন, যদি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিগত ৩০ বছর ধরে কুমারখালী-খোকসা অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের একটি যৌক্তিক দাবিকে উপেক্ষা, অবজ্ঞা এবং অবহেলা না করতো। তাহলে হয়ত ঠুনকোভাবে কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরবে না। নিহত শিক্ষার্থী মনিরের বাবা বিল্লাল হোসাইন বলেন, কুমারখালী থেকে বাস চললে হয়তো এমন দুর্ঘটনা নাও ঘটতে পারতো। আর যেন কারো সন্তান না হারায়, সেজন্য তিনি দ্রুত বাস চালুর দাবি জানান। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ কে বার বার ফোন দিলেও তিনি কলটি রিসিভ করেননি। আবার ক্ষদে বার্তা পাঠিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ইবির নতুন পরবিহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, আমাকে এ পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এর আগে আমরা এ সেক্টরে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি দেখেছি। আমি সকল প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি নির্মূল করতে কাজ করবো। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।