মিজানুর রহমান নয়ন ॥ ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী কুষ্টিয়ার মো. শাহাতাবের বয়স ৭০ বছর ছাড়িয়েছে। অন্য আর দশজনের মতো এ বয়সে তাঁর শুয়ে বসে আরাম আয়েশে বিশ্রাম নেওয়ার কথা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে পাঁচ জনের সংসারে ঘানি টানতে ভ্যান নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এবেলা ওবেলা। ঝড়িয়েছেন ঘাম। তবে মাসখানেক আগে চিকিৎসক জানিয়েছেন তাঁর শরীরে বাসা বেধেঁছে ব্রেইন টিউমার। রোগ সারাতে এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন তাঁর স্ত্রী, বিক্রি করেছেন উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ভ্যানটিও। তাতেও মেলেনি রোগমুক্তি। ফের চিকিৎসক জানিয়েছেন বাঁচতে হলে শরীরে অস্ত্রপাচার করাতে হবে।
যেতে হবে ঢাকায়। খরচ লাগবে প্রায় দুই লাখ টাকা। কিন্তু সারাজীবন যাঁর নুন আনতে পানতা ফুরিয়েছে। কোথায় পাবেন তিনি এতো টাকা। তাইতো টাকার অভাবে থমকে দাঁড়িয়েছে তাঁর চিকিৎসা। বাঁচার আকুতি নিয়ে ঘরের মধ্যে সারাক্ষণ গুমড়ে কাঁদছেন এই বৃদ্ধ ভ্যানচালক। শাহাতাব কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের সোন্দাহ গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারে তাঁর স্ত্রী হালিমা খাতুন (৬০), নিহত সন্তানের স্ত্রী ফিরোজা খাতুন, নাতি শাবুল (২৩) ও নাতনি শমা (১৩) রয়েছেন। গত শুক্রবার ( ২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাটির টিনশেড ঘরে কাঠের চৌকিতে বসে আছেন বৃদ্ধ শাহাতাব।
তাকে খাওয়াচ্ছেন স্ত্রী হালিমা। তাঁদের চোখের কোণে জমেছে আছে ছলছল জল। চোখে, মুখে কপালে চিন্তার ভাঁজ। এসময় বৃদ্ধ হালিমা খাতুন ভারী ভারী কণ্ঠে বলেন, রোগটা ধরার পরে ২০ হাজার টাহা লোন করে সিটি গোল (সিটি স্ক্যান) করিছি, রক্ত-প্রসাব পরীক্ষা করিছি। তাতে হলোনা। আবার ৩০ হাজার টাহায় ভ্যানটাও বেচে পরীক্ষা করিছি। এহন ডাক্তার কচ্ছে অপারেশন করতে, ঢাকায় নিতে। দুই লাখ টাহা লাগবি। এতো টাহা কোনে পাবো। বাঁচার আকুতি জানিয়ে কাঁন্নাজড়িত কিছুক্ষণ থেমে থেমে ভাঙা গলাঁয় বৃদ্ধ মো. শাহাতাব বলেন, ডাক্তার এহন দুই লাখ টাহা চাচ্ছে। বাঁচতে হলে তো টেকা লাগবি। আমার তো টেকাটুকি নাই।
বাঁচার মতো ডাক্তার দে ইটু দেহালে পড়েন। এই এহন চাই। সংসারে টানাপোড়ন লেগে থাকলেও কেউ ছাড়েনি কারো হাত। তাঁদের সুখে-দুঃখে কেটেছে প্রায় ৪৫ বছর। এক সঙ্গে থাকার ইচ্ছে আরো বহুকাল বলে জানিয়েছেন স্ত্রী হালিমা খাতুন। তিনি বলেন, এহন সে বাঁচতে চাচ্ছে। আমার তো টেহা পয়সা নাই। ঢাকা নেওয়ার কথা বারবার কচ্ছে আর কাঁনতেছে। দেহেন আপনারা ইটু সহযোগীতা করতে পারেন কিনা! জানা যায়, প্রায় দুই শতাংশ জমির উপর দুইটি ছেলে সন্তান নিয়ে বাস বৃদ্ধ শাহাতাব ও হালিমা দম্পতির। তাঁদের বড় ছেলে শহিদুল (৪২) পেশায় দিনমজুর। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন। ছোট ছেলে শাহিন দুর্ঘটনায় মারা যান ১৩ বছর আগে। তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান বাস করেন বৃদ্ধ দম্পতির সঙ্গে। শাহিনের স্ত্রী ফিরোজা খাতুন বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই ছেলে-মেয়েসহ তিনি শ্বশুর- শ্বাশুড়ির সঙ্গে বসবাস করছেন।
শ্বশুর দিনে ৪০০-৫০০ টা আয় করতো। তা দিয়েই কোনো রকম চলছিল। তবে শ্বশুর অসুস্থ হয়ে পড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। তিনি চিকিৎসায় বিত্তবানদের সহযোগীতা প্রত্যাশা করেছেন। (নগদ/বিকাশ নাম্বার-০১৭৫০-৬৩২৪০৬)। ছেলে শহিদুল ইসলাম বলেন, তারা গরীব মানুষ। তাদের টাকা-পয়সা, জায়গা-জমি নেই। বাবার চিকিৎসার জন্য তিনি বিত্তবানদের সহযোগীতা চেয়েছেন। ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, লিখিত আবেদন পেলে সাধ্যমত সহযোগীতা করা হবে। তিনিও বৃদ্ধ চালকের চিকিৎসায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
