সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের পাঠ্যবই জিম্মি করে রশিদ বইয়ের মাধ্যমে টাকা নেওয়া অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাদিপুর আলিম মাদ্রাসা ও সাদিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে প্রতিবেদকের টাকা লেনদেনের কয়েকটি রশিদের পাতা এসেছে। তবে শিক্ষকরা বলছেন, বইয়ের জন্য নয়, বই বিতরণ উপলক্ষ্যে বেতন, সেশন ফি, বিদ্যুত বিলসহ বিভিন্ন খরচের জন্য ১৮০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। আর প্রশাসন বলছে, পাঠ্যবইকে জিম্মি করে কোনো টাকা তোলা যাবেনা। জানা গেছে, উপজেলার চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাদিপুর আলিম মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণি থেকে আলিম পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৪০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তার মধ্যে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণের নামে রশিদের মাধ্যমে ১৮০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। আর সাদিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২৩৫ জন। তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। তবে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের রশিদ দেওয়া হয়নি। এতে অখুশি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে সরকারি বই পাব, সেই আশায় প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা না থাকায় শিক্ষকরা বই দেয়নি। পরে বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে এসে বই পেয়েছি। এতে তাঁরা অখুশি। তাঁদের ভাষ্য, শিক্ষকরা টাকার জন্য অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। অভিভাবক বাকী বিল্লাল জানান, তাঁর বোন এবছর নবম শ্রেণিতে উঠেছে। বোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বই আনতে গিয়েছিল। কিন্তু টাকা না থাকায় বই দেয়নি স্যাররা। পরে রশিদ ছাড়ায় ৩০০ টাকার বিনিময়ে বই পেয়েছে তাঁর বোন।
অভিভাবক গাফফার জানান, টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয়ে সরকারি বই দেওয়া হচ্ছে। তার ছেলের কাছ থেকে ৪০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসার নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর ভাই মো. সাগর হোসেন জানান, সেশন ফি বাবদ তার বোনের কাছ থেকে ৪৫০ টাকার বিনিময়ে বই দিয়েছে। তাঁর ভাষ্য, এটা এক ধরনের জুলুম করছে শিক্ষকরা। এটা তো নিয়ম না। অভিভাবক আনোয়ার হোসেন জানান, ১০০ টাকার বিনিময়ে তাঁর মেয়ের তৃতীয় শ্রেণির বই দিয়েছে মাদ্রাসার স্যার। বড় মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তার বই বাবদ ৪০০ টাকা বাকীরর খাতায় লিখেছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সাদিপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল কালাম জানান, সেশন ফি ও জানুয়ারি মাসের টাকা অগ্রিম নিয়ে বই বিতরণ করা হয়েছে। অনেকে টাকা ছাড়াও বই পেয়েছে। টাকার রশিদও দেওয়া হচ্ছে। তাঁর ভাষ্য, এটা কোনো অনিয়মের মধ্যে পড়েনা। অভিভাবকরা আগে থেকে জানত।
অভিযোগ অস্বীকার করে সাদিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদর উদ্দিন জানান, বইয়ের জন্য নয়, বেতন, সেশন ফি ও বিদ্যুত বিল বাবদ ১০০ -২০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। যে রশিদ চাচ্ছে, তাকে দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী এজাজ কায়সার জানান, টাকা দিয়ে বই দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবেন তিনি। ইউএনও মো. মাহবুবুল হক জানান, বিনামূল্যের পাঠ্যবই জিম্মি করে কোনো বেতন, সেশন, বিদ্যুত বিল নেওয়া যাবেনা। গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
