কুমারখালীতে কিশোরীর আত্মহত্যাচেষ্টা - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুমারখালীতে কিশোরীর আত্মহত্যাচেষ্টা

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: নভেম্বর ১৪, ২০২৫

কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পরকীয়া প্রেমের জেরে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এক কিশোরী (১৪)। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রেমিকের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সাইকেল গ্যারেজে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে কিশোরীর স্বজনদের বিরুদ্ধে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের সোন্দাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মো. অনিকের (২২) দোকানে এ হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি ওই এলাকার কৃষক মাসুদুর রহমানের ছেলে। এরআগে, গত বুধবার (১২ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই কিশোরী। বর্তমানে সে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, প্রায় এক বছর ধরে উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের বাঁশআড়া গ্রামের এক ব্যবসায়ীর মেয়ে ওই কিশোরীর সঙ্গে সোন্দাহ গ্রামের মাসুদুর রহমানের ছেলে অনিকের প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছে।

বিষয়টি জানাজানি হলে প্রায় চার মাস আগে স্থানীয়ভাবে সালিশ বসানো হয়। সালিশে তাদের প্রেম ভেঙে দেন মাতুব্বররা। সালিশের সপ্তাহখানেক পরে অনিককে অন্যত্র বিয়ে দেন পরিবারের সদস্যরা। দুই সপ্তাহ আগে ওই কিশোরীকে অন্যত্র বিয়ে দেন তার স্বজনরা। তবুও তাদের মধ্যে ফোনে যোগাযোগ চলছিল। এনিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে মনোমালিন্য ছিল। বুধবার সকাল ৯টার দিকে বাবার বাড়ির নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে কিশোরী। টের পেয়ে স্বজনরা তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। সেই ক্ষোভে কিশোরীর বাবা, চাচাসহ ৮-১০ জন অনিকের দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালান। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, সোন্দাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে অনিকের সাইকেল গ্যারেজের দোকান।

দোকানের যন্ত্রপাতি, আসবাব, মালামাল ভাঙচুর করা হয়েছে। সেখানে উৎসুক জনতা ভিড় করেছেন। রয়েছে পুলিশ। এসময় অনিকের বাবা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে ওই কিশোরীর এক বছরের প্রেম ছিল। এ নিয়ে চারমাস আগে সালিশ বসানো হয়েছিল। সালিশের সপ্তাহখানেক পর ছেলেকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়েছি। বিয়ের পরও বিভিন্ন নম্বর থেকে ছেলেকে কল দেয় ওই মেয়ে। কিন্তু ছেলে কোনো কথা বলেনি। হঠাৎ জানতে পারি বুধবার ওই মেয়ে গলায় ফাঁস নিছে। সকালে মেয়ের বাবা, চাচাসহ ৮-১০ জন ছেলের দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। পুলিশ এসেছিল।

থানায় মামলা করবো।’ এ বিষয়ে জানতে প্রেমিক অনিককে পাওয়া যায়নি। তার ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ওই কিশোরীর বাড়িতে উৎসুক জনতা। আহাজারি করছেন তার মা। বাড়িতে নেই তার বাবা ও চাচা। এসময় কিশোর’র মা বিলাপ বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘১৪ দিন মতো হল মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। তবুও ওই ছেলে মেয়েকে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে কল করে। শ্বশুরবাড়ির সামনে গিয়ে ঘোরাঘুরি করে। তবে বাড়িতে কোনো ঝগড়াঝাঁটি ছিল না।

হঠাৎ বুধবার সকালে খাওয়ার পরে গলায় ফাঁস নিয়েছে মেয়ে। বর্তমানে আইসিইউতে আছে। আমি এর বিচার চাই। তবে আমরা কারও দোকান ভাঙিনি।’ কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হোসেন ইমাম বলেন, ওই কিশোরী বর্তমানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তবে বর্তমানে সে আশঙ্কামুক্ত। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘প্রেমের সম্পর্কের জেরে এক মেয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহননের চেষ্টা করেছে। সেই ক্ষোভে স্বজনরা আজ (গতকাল) প্রেমিকের দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’