কুমারখালীতে কবিরাজের দেখানো পুকুরে মিলল নিখোঁজ শিশুর লাশ - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুমারখালীতে কবিরাজের দেখানো পুকুরে মিলল নিখোঁজ শিশুর লাশ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪

মিজানুর রহমান নয়ন ॥ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে নিখোঁজের প্রায় ১৯ ঘণ্টা পরে সিদ্রাতুল মুনতাহা নামের আড়াই বছর বয়সি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে স্বজনরা। গতকাল বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর সরদারপাড়ার হাকিম সরদারের পুকুর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সে ওই এলাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলামের মেয়ে।

পরে খবর পেয়ে দুপুর ২ টার দিকে কুমারখালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে মরদেহটির সুরতহাল করে। তবে ময়নাতদন্তের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশ। তবে শিশুটির স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, ওই পুকুরের পাশে তালগাছ আছে। সেখানে জলপরী ও জ্বিন বাস করে। মেয়েটিকে ওরাই তুলে নিয়ে মেরেছে। তবে পুলিশ ও চিকিৎসক বলছেন স্বজনদের দাবি অযৌক্তিক ও বিজ্ঞান সম্মত নয়।

শিশুটির চাচা মিরাজুল ইসলামের ভাষ্য, গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫ টা থেকে শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা। আশপাশের পুকুর, প্রতিবেশী ও স্বজনদের বাড়িসহ সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এঘটনায় ওই দিন রাতেই থানায় জিডি করা হয়। এরপর গতকাল বুধবার সকালে এক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলেন শিশুটির বাবা। দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে কবিরাজের দেখানো পুকুর থেকে শিশুটির ভাসমান মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

মরদেহ উদ্ধারের প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিবেশী চাচা আতিয়ার রহমান (৪১) বলেন, ঐ জায়গা রাতেও অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়েছে। পাওয়া যায়নি। তবে দুপুরে শিশুর বাবা প্রথমে বুক সমান পানিতে নেমে ওযু করল। তারপর পানিতে দুধ ঢালল, লবণ দিল। একটা ডাব ডুবিয়ে দিল। এরপর ডাবও ভাসে উঠল, লাশও ভাসল। এলাকাবাসী জানান, শিশুটির বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ মিটার দুরে ‘৫৫৫’ নামক একটি ইটভাটা আছে। ভাটায় শিশুর বাবা ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন।

প্রায়ই শিশুটি একা একা হেটে বাবার কার্যালয়ে যেত। গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে বাবার কাছে যাওয়ার সময় শিশুটি নিখোঁজ হয়েছিল। আশপাশের পুকুর, প্রতিবেশী ও স্বজনদের বাড়িসহ সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এঘটনায় ওই দিন রাতেই থানায় জিডি করা হয়। এরপর আজ বুধবার সকালে এক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলেন শিশুটির বাবা। দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে কবিরাজের দেখানো পুকুর থেকে কবিরাজের বলা পরামর্শ অনুযায়ী শিশুটির ভাসমান মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সকালে ১১ টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শিশুটির বাড়ির সামনে কাঁচা সড়ক।

সড়ক ঘেঁষে বড় পুকুর রয়েছে। পুকুরে জাল টেনে খোঁজা হচ্ছে শিশুটিকে। সড়ক ও পুকুরপাড়ে উৎসুক জনতার উপচে পড়া ভিড়। এরপর দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে স্বজনরা শিশুটির মরদেহটি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তখন স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে আকাশ-বাতাস। এসময় কাঁন্নাজড়িত কণ্ঠে শিশুটির মা পিংকি খাতুন বলেন, ‘প্রায়ই মেয়ে একা একা ওর বাবার অফিসে যেত। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আর ফিরে আসেনি। আমার কোনো শত্রু নেই। কেউ ওকে মারিনি। আল্লাহর মাল আল্লাহ নিছে। কোনো অভিযোগও নেই। বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি।

পরে কবিরাজের দেখানো পুকুরে কবিরাজের পরামর্শ অনুযায়ী লাশ পেয়েছি। ওই পুকুরে জলপরী আছে। হয়তো আমি জলপরীর কোনো ক্ষতি করেছি। সেজন্য আমার মেয়েকে জলপরীই মেরেছে। আমার কোনো অভিযোগ নেই। ‘৫৫৫’ ভাটার নৈশ্যপ্রহরী আবু বক্কর (৬১) বলেন, অনেবার রাতে পুকুর ও তালগাছে জলপরী ও জ্বিন-ভূত দেখেছি। কখনও গলাকাটা, কখনও সাদা কাপড় পরা। ঝড়ের রাত না হলেও আবার কখনও দেখতাম তালগাছটি পড়ে যাচ্ছে মাটিতে। গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ রফিকুল ইসলাম বলেন, পাশেই কালি মন্দির আছে। বাপ দাদার মুখে শুনতাম, তালগাছের ওখানে প্রায় গরু মহিষ মরে থাকত।

প্রায় ৩৫ বছর আগে এলাকার নিজাম নামে একজন মারা গিয়েছিল। এই পুকুরে এনিয়ে তিনজন মারা গেল। কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মু. আহসানুল মিজান রুমী বলেন, স্বজনদের দাবি অযৌক্তিক ও বিজ্ঞান সম্মত নয়। ময়নাতদন্ত করলে সঠিক কারণ জানা যাবে। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল। আর বুধবার দুপুরে পুকুর থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করে সুরহাল করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত হবে কি না?  তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাঁর ভাষ্য, স্বজনদের দাবি জলপরী বা জ্বিনের কারণে এঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে তাদের দাবি আইন ও বিজ্ঞান বহির্ভূত বলে তিনি জানান।