কুষ্টিয়ায় বাড়ছে প্রসূতি মৃত্যু ও এতিম শিশুর সংখ্যা - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ায় বাড়ছে প্রসূতি মৃত্যু ও এতিম শিশুর সংখ্যা

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: জুন ২৫, ২০২৩
কুষ্টিয়ায় বাড়ছে প্রসূতি মৃত্যু ও এতিম শিশুর সংখ্যা

কুষ্টিয়ায় যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অবৈধ ক্লিনিকগুলো প্রসূতি মায়েদের মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো চিকিৎসা সেবাকে কেবলমাত্র মুনাফা আয়ের পথ হিসেবে নেয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। চিকিৎসার নামে জীবনহানি নিত্যদিনের ঘটনা হলেও প্রতিকারে দোষীদের বিরুদ্ধে কার্যত কোন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ না নেয়াকে দুষছেন তারা। একের পর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এসব ক্লিনিক বন্ধে দায় নিচ্ছে না কেউ। সিজারে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় মায়ের আদর বঞ্চিত এতিম শিশুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

কুষ্টিয়ায় বাড়ছে প্রসূতি মৃত্যু ও এতিম শিশুর সংখ্যা

কুষ্টিয়ায় বাড়ছে প্রসূতি মৃত্যু ও এতিম শিশুর সংখ্যা

কুষ্টিয়ায় বাড়ছে প্রসূতি মৃত্যু ও এতিম শিশুর সংখ্যা

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে ৬ হাজার ৩১২ জীবিত শিশু জন্ম দিতে গিয়ে প্রসবকালীন সময়ে ৭ প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালে প্রসবকালীন সময়ে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু সংখ্যা ২৫ জন থাকলেও ২০২২ সালে এ সংখ্যাটি দাঁড়ায় ২৭ জনে। এসব মৃত্যুর ঘটনার ৯০ শতাংশই ঘটেছে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে। ভুল চিকিৎসা বা অবহেলাজনিত কারণে এসব মৃত্যু ঘটেছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অভিযোগকে ভিত্তিহীন মনে করছেন না স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

google news

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৩ জুন পর্যন্ত সময়কালে সংঘটিত মাতৃ মৃত্যুর ঘটনাগুলো অনুসন্ধানে বিভিন্ন ক্লিনিকে ৮ জন প্রসূতির মৃত্যু ঘটনার পর্যালোচনায় জেলার স্বাস্থ্য সেবার ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। এরা সবাই অদক্ষ ও অপেশাদার ভুয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে কথিত সিজারের শিকার হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সদ্যজাত শিশুকে রেখে মারা যান। একজন প্রসূতি শিশুসহ মারা যান বলে অভিযোগ পরিবারের।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের ৩ জুন কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার পোড়াদহে ‘নাহার ক্লিনিকে’ সদর উপজেলার দোস্তপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শিল্পী খাতুন (২২) নামের এক প্রসূতি অদক্ষ ভুয়া নার্সের হাতে সিজারের শিকার হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়। অভিযোগ আছে, এই নাহার (প্রাঃ) ক্লিনিকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক হিসেবে ডা. আক্তারুজ্জামান ফিরোজ নামে যিনি কাজ করেন তিনি কার্যত একজন মাদকাসক্ত ভুয়া চিকিৎসক। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মিরপুর থানা পুলিশের হাতে ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয় বলে স্থানীয়রা জানান।

২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া ইসলামিয়া এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক হাসপাতাল নামে একটি অবৈধ ক্লিনিকের ওয়ার্ডবয় এবং আয়া মিলে রিমা খাতুন (২৮) নামে এক প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি করান। এ সময় টেনে হিঁচড়ে নবজাতককে মায়ের গর্ভ থেকে বের করতে পারলেও প্রসূতির ইউটেরাস ছিড়ে ফেলে। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রিমাসহ নবজাতক শিশুটির মৃত্যু হয়।

সিজারের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে গত ২ মার্চ ভেড়ামারা সাদিয়া ক্লিনিকে নাসিমা, ২০২১ সালের ৯ জুন সনো হাসপাতালে নাসরিন নাহার রিপা (২১), ১ অক্টোবর সদর উপজেলার সেবা ক্লিনিকে তুলিকা বেগম (২৫), ২০২০ সালের ১ আগস্ট কুমারখালি উপজেলার তানিয়া খাতুন (২২) কুষ্টিয়া ইসলামিয়া হাসপাতালে, ১ সেপ্টেম্বর উপজেলার সোন্দাহ গ্রামের শাপলা খাতুন (২২) জেলা শহরের শাপলা ক্লিনিকে এবং ৯ মার্চ পেয়ারাতলায় ‘পদ্মা প্রাইভেট হাসপাতালে’ ওই উপজেলার সাওতা গ্রামের ফাতেমা খাতুনের (২৪) মৃত্যুর অভিযোগ করেন পরিবার। তারা সবাই সদ্যজাত শিশুকে এতিম করে মারা যান।

এ বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও বিএমএ নেতা ডা. আমিনুল হক রতন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসার বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের অধিকতর সতর্কতা জরুরি। সামান্যতম অবহেলার কারণে প্রাণহানি হতে পারে। জেলার বিভিন্ন অবৈধ ক্লিনিকগুলোতে মা ও শিশুর যথাযথ পরিচর্যা ও চিকিৎসার কোন ব্যবস্থাই নেই। অথচ কিছু অসচেতন রোগীরা সেখানে গিয়ে নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন বলে আমরা জানি। এসব নিরসনে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগকে আরও দায়িত্বশীল ও যত্নবান হওয়া জরুরি’।

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসায় অবহেলার কারণে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু ঘটনার সংবাদ পেলেই আমরা সেখানে ছুটে যাই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যতাও পাই। সেক্ষেত্রে ক্লিনিক বা হাসপাতাল বন্ধের সুপারিশ করি।

সর্বশেষ মিরপুর উপজেলার পোড়াদহে নাহার ক্লিনিকে চিকিৎসা অবহেলায় শিল্পী খাতুন নামের প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে ওই ক্লিনিকের জন্যই। ওদের এ জাতীয় চিকিৎসা দেয়ার মতো প্রয়োজনীয় কোন আয়োজন ও অনুমোদন কোনটাই নেই।’ এসব ক্ষেত্রে রোগীদেরও আরও সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করেন এই সিভিল সার্জন।

আরও পড়ুন: