বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের সন্ত্রাসী উজ্জল সরদার বাহিনীর সদস্যরা ওপেনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, প্রশাসনের নেই কোনো ব্যাবস্থা। কিছুদিন পূর্বে ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’-এর পরেও মরিচা এলাকার সন্ত্রাসী বাহিনী উজ্জ্বল সরদারের অবৈধ বালু উত্তোলনের গাদা এখনো অক্ষত রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের অভিযানের পরও ওই স্থানে অবৈধভাবে তোলা বালু বৈধ বলে প্রচার করছে সরদারি বাহিনীর লোকজন। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, উজ্জ্বল সরদারের নেতৃত্বাধীন একটি প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘদিন ধরে নদী ও খাল থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছে। সাম্প্রতিক অভিযানে কিছু যন্ত্রপাতি জব্দ করা হলেও মূল বালুর গাদা রয়ে গেছে আগের জায়গায়।
আর এই বালুর গাদা থেকেই বিক্রয় হচ্ছে অবৈধ উত্তোলনের বালু। তবে সন্ত্রাসী সরদার বাহিনী প্রধান উজ্জ্বল সরদার যেখানে বালুর গাদা করেছে, এতে স্থানীয় বসবাসের পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়েছে। তবে চরাঞ্চলে সদ্য ট্রিপল মার্ডারের মধ্যে, ডাবল মার্ডার মামলারের এজাহারভুক্ত পলাতক আসামী এই সন্ত্রাসী উজ্জ্বল সরদার। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভুরকা হাটখোলা বাজারের বাহিনীর প্রধান উজ্জ্বল সরদার জোড়া হত্যা মামলার আসামি হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। উজ্জ্বল সরদার তার এলাকাতে ও বাড়ির নিচে ওপেন সিক্রেটভাবে নিয়মিত ঘোরাঘুরি করে। গত ২০২৩ সালের ১৩ জুন মাসে ভুরকাপাড়া হাটখোলা বাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও গরুতে ক্ষেতের পাট খাওয়াকে কেন্দ্র করে সরদার ও মালিথা বংশের মধ্যে সংঘর্ষে ভেলোশ মালিথা (৪০) ও বজলু মালিথা (৪২) নিহত হন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় উজ্জ্বল সরদার ও তার সহযোগীদের নাম এজাহারে উল্লেখ থাকলেও সেই সময় সন্ত্রাসী উজ্জ্বল সরদার ক্ষমতার অপব্যবহার কারনে প্রশাসন নীরবে ছিলেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি দৌলতপুর উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে কুষ্টিয়া জেলা শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতির পদও দখল করেন। সেই সুযোগে অবৈধ বালু ব্যবসা, চরভূমি দখল, নদীপথে অস্ত্র ও মাদক বাণিজ্যের মাধ্যমে গড়ে তোলেন কোটি কোটি টাকার সাম্রাজ্য, বালু তোলা অবৈধ অস্ত্র, ড্রেজার, স্পীডবোড, নৌকা। তথ্যমতে, উজ্জ্বল সরদারের অবৈধ উত্তোলনের বালুগাদা জব্দ করলে আসবে সরকারের রাজস্ব থামবে সংঘাত। তবে মরিচা ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ আরো জানান, “উজ্জ্বল সরদার ও তার বাহিনী এলাকায় খড়ের মাঠ, বালুর ঘাট, এমনকি সরকারি জমিও দখল করছে। উজ্জ্বল সরদার কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করেন। বিনিময়ে ওই কর্মকর্তারা অর্থনৈতিক সুবিধা পান বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক্সেন রশিদুর রহমান বলেন, উজ্জ্বল সরদার পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার এন লিষ্টেড ঠিকাদার না, তিনি সব কন্টাকে কাজ করে, তবে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়নবোর্ডের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী উজ্জ্বল সরদারের অপকর্মের সাথে জড়িত থাকলে,অভিযোগ পেলে, সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এলাকাবাসীর দাবি, একসময়ের কুখ্যাত ‘লালচাঁদ বাহিনীর’ এক সময়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন উজ্জ্বল সরদার। বর্তমানে তিনি নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে পদ্মার চরাঞ্চলে দখলবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, এই অবৈধ বালু গাদা নিয়ে আবারও বাহিনীদের মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে।
উল্লেখিত বিষয়ে জেলা প্রশাসক কুষ্টিয়া মো. ইকবাল হোসেনের মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, নতুন যোগদান করলাম, বিষয়গুলো শুনলাম, খোজ খবর নিয়ে সত্যতার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে উজ্জ্বল সরদার একাধিক ডাবল মার্ডার মামলার এজাহারভুক্ত পলাতক আসামী, তাই গ্রেফতার প্রসঙ্গে দৌলতপুর ও ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হলে তিনি কখনোই ফোনকল রিসিভ না করে, কেটে কেটে দেন।
