ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় ৫ শিক্ষার্থী কারাগারে - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় ৫ শিক্ষার্থী কারাগারে

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: নভেম্বর ২০, ২০২৪

ইবি প্রতিনিধি ॥ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলে নবীন শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ের ঘটনা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী। মামলা দায়েরের পর পুলিশ হেফাজতে থাকা ৫ অভিযুক্তকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে, ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাব্বির হোসেন, লিমন হোসেন, শেহান শরীফ, কান্ত বড়ুয়া, শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, জিহাদ এবং ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সঞ্চয় বড়ুয়া। অভিযুক্ত সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

এদের মধ্যে সাব্বির হোসেন, শেহান শরীফ, লিমন হোসেন, কান্ত বড়ুয়া ও সঞ্চয় বড়ুয়াকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক ও সহকারী রেজিস্ট্রার জিল্লুর রহমানকে সদস্য সচিব করে গঠিত ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. ফখরুল ইসলাম ও হলের আবাসিক শিক্ষক রসুল করিম। উক্ত কমিটিকে আগামী রোববারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে, তবে মামলার বিষয়টা আলাদা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ফরিদ উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, গত রাতে র‌্যাগিংয়ে জড়িতদের পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়। ভুক্তভোগীদের একজন বাদী হয়ে এ বিষয়ে মামলা করেছে। এরই প্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় আটককৃত ৫ জনকে কোর্টে পাঠানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত সোমবার মধ্যরাতে লালন শাহ হলের ৩৩০ নং কক্ষে (গণরুম) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন আমির হামজা, শামীম রেজা, রাকিবুল হাসান, আবু সাইম। চুপচাপ থাকায় ভুক্তভোগীদের একজনকে ৫ রকমের হাসি দিতে বলা হয়, অপর একজনকে সিনিয়র ভাইকে কল দিয়ে বাজে ভাষায় কথা বলতে বলা হয় এবং আরেকজনকে নাচতে বলে অভিযুক্তরা।

এছাড়াও, গত ১৬ নভেম্বর রাতে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী সাদী অ্যান্ড হাদী ছাত্রাবাসে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পর্ণ তারকাদের নাম জিজ্ঞাসা ও তাদের রোল প্লে করতে বলা, অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো এবং গালিগালাজ করে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য, গত সোমবার (১৮ নভেম্বর) মধ্যরাতে লালন শাহ হলের ৩৩০ নং কক্ষে (গণরুম) এঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন আমির হামজা, শামীম রেজা, রাকিবুল হাসান, আবু সাইম; এরা প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের নবীন শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাব্বির হোসেন, লিমন হোসেন, শিহান শরীফ, কান্ত বড়ুয়া, সাকিব  শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, জিহাদ এবং ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সঞ্চয় বড়ুয়া।

অভিযুক্ত সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। শফিউল্লাহর নেতৃত্বে ৯ জন শিক্ষার্থী মিলে নবীন ব্যাচের ১৬ জন শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে আসছিলো বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের হাতেনাতে ধরে থানায় সোপর্দ করে হলের শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না অলি। র‌্যাগিং এর শিকার ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের উপর অসহনীয় নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভুক্তভোগী সাইম, রাকিবুল, শামীম, রাকিব, হামজা, রিশান, মামুন, তারেক ও তানভীরকে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে দেখা করতে বলেন অভিযুক্ত শিহান শরীফ। পরে তাদেরকে লালন শাহ হলের ৩৩০ নং কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরে ভুক্তভোগী শামীম, সাইম, হামজা ও রাকিবুলকে রুমে রেখে বাকীদের রুম থেকে বের করে দেয় অভিযুক্ত সাব্বির ও সঞ্চয় বড়ুয়া। এরপর তাদের উপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

চুপচাপ থাকায় ভুক্তভোগীদের একজনকে ৫ রকমের হাসি দিতে বলা হয়, অপর একজনকে সিনিয়র ভাইকে কল দিয়ে বাজে ভাষায় কথা বলতে বলা হয় এবং আরেকজনকে নাচতে বলে অভিযুক্তরা। এছাড়া এক বন্ধুকে দিয়ে আরেকজনকে গালি দেয়ানো হয়। এছাড়াও, নবীনদের পরিচয় পর্ব শেখানোর নামে বিকৃত যৌনতা মূলক আচরণ করানো হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৬ নভেম্বর রাতে নবীন শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী সাদী অ্যান্ড হাদী ছাত্রাবাসে নিয়ে যেয়ে রাত আড়াইটা পর্যন্ত র‌্যাগিং করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সেদিন কয়েক শিক্ষার্থীকে পর্ণ তারকাদের নাম জিজ্ঞাসা ও তাদের রোল প্লে করতে বলা হয়, অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো এবং গালিগালাজ করে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না অলি বলেন, আমাকে এক জায়গা থেকে সংবাদ দেওয়া হয় যে আমার হলে র‌্যাগিং চলতেছে।

খবর পেয়ে আমি ৩৩০ নাম্বার রুমে যেয়ে ৩ অভিযুক্ত ও ৪ ভুক্তভোগীকে তাদের হাতেনাতে ধরি। এসময় তারা প্রথমে ঘটনার ব্যাপারে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে চাপ দিলে তারা র‌্যাগিংয়ের ঘটনা স্বীকার করে। পরবর্তীতে অভিযুক্ত বাকিদেরও নিয়ে আসা হয়। গভীর রাত হওয়ায় প্রক্টর স্যার ও প্রভোস্ট স্যারের সাথে কথা বলে তাদের থানায় দিয়ে আসা হয়েছে। অভিযুক্ত সঞ্চয় বলেন, ‘আমাদের ছোটভাই হামজার সাথে সন্ধ্যায় দেখা হলে মন খারাপ দেখতে পাই। পরে আসলে আমি তাকে আলাদাভাবে রেখে দেই। তখন তার সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয় নাকি তাঁকেই জিজ্ঞেস করেন। এসময় উপস্থিত আমীর হামজা বলেন, ‘আমাকে ভাইরা ডেকে বলেন আমার মন খারাপ কেনো? তখন আমাকে পাঁচ রকমের হাসি দিতে বলেন। তবে, যৌন বিকৃত মূলক আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা বিষয়টি অস্বীকার করেন।