ইবি প্রতিনিধি ॥ দুর্বৃত্তদের এলোপাথাড়ি হামলায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীর নাম মশিউর রহমান, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুরে এই হামলার শিকার হন তিনি। মারাত্মকভাবে জখম হয়ে বর্তমানে মশিউর ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝিনাইদহের আরাপপুরের ওই স্থানে গতকাল সন্ধ্যায় মারামারিতে জড়ায় দুই পক্ষে। এসময় এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ধাওয়া করে। ঘটনাস্থলে বিদ্যুৎ না থাকায় পরিস্থিতির মাঝে পড়ে যান আহত মশিউর। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে দৌড়ে পালাতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান তিনি।
এসময় অজ্ঞাতনামা কয়েক দুর্বৃত্ত এসে তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। হামলায় শিকার হন। পরবর্তীতে, বেল্লাল নামক স্থানীয় এক ব্যক্তি আহত মশিউর রহমানকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আহত শিক্ষার্থী মশিউর বলেন, আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারপর কিছু লোকজন ভারী অস্ত্রপাতি নিয়ে তাড়া করে। তারপর আমাকে মারধর করে। আমি স্টুডেন্ট বলার পরও রড, স্টিক দিয়ে আঘাত করে। শরীরের ৬ জায়গায় কাটা পরে। তাতে প্রায় ১৭-১৮ টি সেলাই লাগে। তারা কারা ছিলো আর আমার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান আমাকে দেখতে আসছিলো এবং বিভাগের শিক্ষার্থীরা আমার সাথে আছে। ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শরিফ মোঃ আল রেজা বলেন, মশিউর ঝিনাইদহ তে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। তখন হঠাৎ তার উপর হামলা হয়।
এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা ছিল। পুলিশ টিমের সাথে আমার কথা হয়েছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করে আমাকে জানাবে। এছাড়াও, ছাত্র উপদেষ্টাকে জানিয়ে রেখেছি। আগামীকাল ক্যাম্পাসে গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শাহিন উদ্দিন বলেন, মারামারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর আহতের কথা শুনেছি তবে এবিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি৷ লিখিত অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এদিকে এই ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মশিউর রহমানের উপর দুর্বৃত্তদের হামলার প্রতিবাদ ও অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান, ইয়াশিরুল কবীর, তানভীর মন্ডল ছাড়াও অর্ধশত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে মশিউরের উপর হামলা কেন?; সন্ত্রাসী হামলার দ্রুত ও কঠোর বিচার চাই; নিরাপদ বাংলাদেশ চাই; সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ চাই; কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; মশিউর হাসপাতালে, সন্ত্রাসী কেন বাহিরে? আমার ভাই হাসপাতালে,
ইবি কেন শীত ঘুমে? আজ মশিউর, কাল আমি আপনি বা অন্য কেউ? লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, মশিউর অত্যন্ত সৎ একজন ছেলে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সে ৩/৪ টি টিউশনির সাথে জড়িত। কে তাকে কিভাবে আক্রমণ করছে সেসব আমরা শুনতে চাই না, আমাদের একটাই কথা সে ইবি শিক্ষার্থী, তার উপর হামলার বিচার করতে হবে। যদি বিচারে দীর্ঘসূত্রতা দেখা যায় তাহলে আমরা কঠিন আন্দোলনে বাধ্য হব এবং সেক্ষেত্রে প্রশাসনকে দায়ভার নিতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনকে আলাদা একটি কমিটি গঠন করতে হবে যেন যেকোনো আক্রমণের শিকার হলে তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে পারে।
ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত আক্রমণ করে তাকে দফায় দফায় পিটিয়ে আহত করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিতর্কিত করতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় একটি অংশ দেশের মানুষদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলেও পরোয়া করেনি। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় পর সেই ছাত্রলীগের জঙ্গিরা বিভিন্ন নামে, দলে, প্লাটফর্মে বিভক্ত হয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার পায়তারা করছে। আমরা মনে করছি সেই নিষিদ্ধ গোষ্ঠীটি এই কাজটি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ঝিনাইদহ প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, অনতি বিলম্বে আপনারা দোষীদের চিহ্নিত করে, আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। মশিউরের যাবতীয় চিকিৎসার খরচ ও আইনি সহায়তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিতে হবে এবং যতদিন না সে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয় ততদিন প্রশাসনকে তার দেখভাল করতে হবে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়। মারাত্মকভাবে জখম হয়ে বর্তমানে মশিউর ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
