বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলে তাকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গতকাল সোমবার (৭ অক্টোবর) আবরার ফাহাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী।
এ উপলক্ষেগতকাল সোমবার দুপুরের দিকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে মৌন মিছিল ও স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। আবরার ফাহাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোজাক্কির রহমান রাব্বি, সদস্য সচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিন নিশাত, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম রুপল, সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক রকিব উদ্দিন জুয়েল, সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম সহ সংগঠনটির কয়েকশত নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিন নিশাত বলেন, আবরার ফাহাদকে নির্মম নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। তবুও তাদের এই সংগঠনকে অবৈধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে হাসিনা ফায়দা হাসিল করে।
তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। যেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে দেখবেন, সেখানেই তাদেরকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিবেন। এসময় তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে বর্বর সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে নিহত হয় আবরার ফাহাদ। আবরার ফাহাদের স্মরণে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হোক। আবরার আমাদের কুষ্টিয়ার সন্তান। তার স্মৃতির ফলক হিসেবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করার দাবি জানাচ্ছি। স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হলে আমরা খুশী হবো। অতি দ্রুত আবরার ফাহাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকরসহ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি। প্রসঙ্গত, আবরার ফাহাদ ১৩ মে ১৯৯৮ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রথমে কুষ্টিয়া মিশন স্কুল ও পরে জিলা স্কুলে লেখাপড়া শেষ করে ২০১৮ সালে ৩১ মার্চ তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হন। আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নৃশংস কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করে সংগঠনটির ক্যাডাররা। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
দেশব্যাপী আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর ফুঁসে ওঠেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিষিদ্ধ করা হয় ছাত্ররাজনীতি। পরে খবরে আসে, সেই ২০১১ নম্বর কক্ষটিকে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহার করতো ছাত্রলীগ। সেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেই রুম থেকে নির্যাতনে ব্যবহৃত লাঠি, স্ট্যাম্প, রড, চাকু ও দড়ি উদ্ধার করেছিল ডিবি পুলিশ। এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। দায়ের করা হয় হত্যা মামলা। ওই মামলায় সব মিলিয়ে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
