আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে নবান্ন উৎসব - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে নবান্ন উৎসব

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নবান্ন উৎসব। আগের মতো কৃষকের উঠোনজুড়ে ধান মাড়াইয়ের ব্যস্ততা নেই, আর ঢেঁকির তালে মুখর হয় না গাঁয়ের বধূদের নবান্নের গীত। নবান্ন এখন কেবল স্মৃতির এক দীর্ঘশ্বাস। আশি ও নব্বইয়ের দশকে আমন ধানের সোনালি ঢেউ খেলত কুষ্টিয়ায়। সাদা দিঘা, সরসরিয়া, লাউজাল, মাটিয়াগড়লের মতো দেশি ধান কাটার মধ্য দিয়েই শুরু হতো নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতি। কৃষকেরা সারারাত জেগে গরু দিয়ে ধান মাড়াই করতেন, আর নতুন ধানের প্রথম অংশ বাড়ির গিন্নি তুলে নিতেন পিঠা-পায়েসের জন্য। নবান্ন তখন শুধু একটি দিন ছিল না, বরং পৌষ মাস পর্যন্ত বিস্তৃত আনন্দযজ্ঞ। ঘরে ঘরে নতুন খেজুরের রস মেশানো দুধের পিঠা, ভাঁপা, পাকান, কুশলি ও পাটিসাপটা তৈরি হতো।

ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই কলাপাতা বিছিয়ে একসঙ্গে বসে খাবার খেতেন। দিনের আলোয় গ্রামীণ খেলাধুলা, কবিগান, জারিগান এবং যাত্রাপালার সুরে উৎসব মুখর হতো। কিন্তু আধুনিক উফশী জাতের ধানের প্রভাব, ট্রাক্টর ও হারভেস্টারের যান্ত্রিক শব্দ, শহুরে জীবনের প্রলোভন এবং পরিবার ভাঙনের কারণে নবান্ন আজ আর প্রাণবন্ত উৎসব নয়। কৃষিকাজ এখন নিছক বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া, আর নতুন প্রজন্মের কাছে লাঠি খেলা বা জারিগানের চেয়ে মোবাইল ও ডিজিটাল বিনোদন আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এখনো কিছু পরিবার ব্যক্তিগতভাবে নবান্ন উদযাপন করার চেষ্টা করে, কিন্তু সার্বজনীন উৎসবের সেই রঙ ও জৌলুস ফিরে আনা সম্ভব হয়নি। দৌলতপুর রিফায়েতপুর গ্রামের কৃষক রিয়াজ আলী মন্ডল জানান, আগে নবান্নে সব পরিবার আনন্দে ভরে থাকত। ধান কাটা, মাড়াই ও পিঠা খাওয়ার আনন্দ ছিল। এখন তা আর নেই, মানুষ শহরের মতো পিঠা কিনে খাচ্ছে।