আচরণ বিধি লঙ্ঘন, কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা তিন যুবকের জেল-জরিমানা - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

আচরণ বিধি লঙ্ঘন, কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা তিন যুবকের জেল-জরিমানা

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: জানুয়ারি ১০, ২০২৪

নির্বাচনি আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি কাজ শুরুর পর গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৬০টি অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্তদের কারণ দর্শাও নোটিশ জারি করেন।

আচরণ বিধি লঙ্ঘন, কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা তিন যুবকের জেল-জরিমানা

কুষ্টিয়ার ৪টি সংসদীয় আসন থেকে জমা হওয়া অভিযোগ গুলি যথাক্রমে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) এ ১৩টি, কুষ্টিয়া-২এ (মিরপুর- ভেড়ামারায় ৬টি, কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনে ২৪টি এবং কুষ্টিয়া-৪, খোকসা-কুমারখালী) ১৭টি। এসব অভিযোগ গুলি আমলে নিয়ে কমিটি প্রধানগণ তাৎক্ষনিক উদ্যোগ গ্রহণ করাতে সম্ভাব্য অসংখ্য সহিংস ঘটনার ভয়াবহতার দৃশ্য ঠেকানো গেছে বলে মনে করছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সচেতন মহলসহ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে সংম্পৃক্ত কর্মকর্তাগণ।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এহতেশাম রেজা বলেন, অনুসন্ধান কমিটির তড়িৎ উদ্যোগের ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ যেমন বজায় ছিলো একই সাথে নৃসংশ প্রাণহানির আশংকাও প্রসমিত হয়েছে। নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি প্রধানগণ সবাই বিচারক হওয়ায় এই কমিটির উদ্যোগে সবাই সারা দিয়েছেন এবং আচরণ বিধি মেনে চলেছেন। এরপরও যে সব ক্ষেত্রে আচরণ বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে সেগুলি হলো কুষ্টিয়া পৌর সভার ০৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ কৌশিক আহমেদের বিরুদ্ধে আচরণ বিধিমালা-২০০৮র ১১/১৮ লঙ্ঘন জনিত অপরাধ সংঘটনের দায়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা, জালভোটের দায়ে তিন যুবকের পৃথক ভাবে ২ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা এবং ৬০টি অভিযোগের অনুকূলে প্রার্থী, সমর্থক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ইস্যুকৃত কারণ দর্শাও নোটিশের শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনকে প্রতিবেদন দাখিল করেন অনুসন্ধান কমিটি।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শহিদুর রহমান বলেন, ‘২২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) রাতে শহরের আড়ুয়াপাড়া দিনমনি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে কুষ্টিয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহবুব উল আলম হানিফের নির্বাচনি প্রচারণা সভায় ৮নং পৌর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ কৌশিক আহমেদ প্রকাশ্যে জনসম্মুখে বলেছিলেন, ‘নৌকার বাইরে কোনো পাখিকে ভোট দিলে পিটিয়ে চামড়া তুলে নেব’ ‘ভোটের দিন সকালে সকল নারী ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে এসে প্রকাশ্যে একদম নৌকার উপর দামকরে সীল মারবেন’ জাতিয় ভয়ভীতি দেখিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এমন অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় এবং অনুসন্ধানী কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের আদেশে এই কাউন্সিলর কৌশিক এর বিরুদ্ধে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেরট কোর্টে মামলা রুজু হয়েছে। উল্লেখ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচান-২০২৪র আচরণ বিধি প্রতিপালনের লক্ষে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক, ১৯৭২ এর ৯১অ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গঠিত নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি’র তৎপরতায় কোনো রূপ উল্লেখ্যযোগ্য সহিংস ঘটনা ছাড়াই কুষ্টিয়ার ৪টি আসনে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনি পরিবেশের মধ্যদিয়ে ভোট গ্রহণ করেছেন নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সমন্বিত সিদ্ধান্তে জেলা পর্যায়ে কর্মরত বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজগনের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠিত হয়। সংসদীয় আসন ৭৫, ৭৬, ৭৭ ও ৭৮ কুষ্টিয়া-১,২,৩ ও ৪ ’র জন্য গঠিত ৪টি নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির প্রধানগণ হলেন যথাক্রমে, মোহা. আসাফ-উদ-দৌলা, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, কুষ্টিয়া, কুষ্টিয়া-১এ, মো. রেজওয়ানুজ্জামান, বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, কুষ্টিয়া, কুষ্টিয়া-২, মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম, বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, কুষ্টিয়া, কুষ্টিয়া-৩ এবং এম, এ আজহারুল ইসলাম, বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ, কুষ্টিয়া-৪ আসনের জন্য নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে আচরণ বিধি রক্ষায় কাজ করেন। নির্বাচনি অপরাধ, নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম এবং নির্বাচনি আচরন বিধিমালা সংক্রান্ত বিষয়সমুহ অনুসন্ধান পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়।,

১৯৭২-এর ৯১-এর বিধানমতে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি প্রাপ্ত অভিযোগসমুহের অনুসন্ধান করে নির্বাচন কমিশন বরাবর রিপোর্ট ও তৎপ্রেক্ষিতে কমিটির সুপারিশ পেশ করেন। আদালত সূত্রে জানা যায়, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইস্যুকৃত শো-কজ নোটিশের লিখিত বক্তব্যসহ স্ব-শরীরে কুষ্টিয়ার চারটি আসনের নির্বাচিত ৪ জন সংসদ সদস্যসহ প্রায় সকল সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীকে কমিটির সামনে হাজির হতে হয়। বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তারা কমিটির সামনে হাজির হয়ে নির্বাচনি আচরনবিধি ও আইন মেনে চলার এবং পরবর্তীতে কোন নির্বাচনি আচরনবিধি ও আইন নিজেদের দ্বারা বা নিজেদের সমর্থকদের দ্বারা ভঙ্গ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কুষ্টিয়ার জিপি অ্যাড. আআসম আকতারুজ্জামান মাসুম জানান,“আচরণ না মানায় সংসদ সদস্য প্রদপ্রার্থীসহ বড় বড় নেতাদের শোকজ নোটিশের মাধ্যমে কমিটির সামনে হাজির হতে দেখে তাদের অনুসরনকারীরা নির্বাচনের মাঠে আইন ও বিধি মেনে চলার প্রতি যত্নশীল হন। আইন ভঙ্গ হলে কমিটির সামনে হাজির হতে এই ভয়ে তারা শঙ্কিত ছিল।’ নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির উদ্যোগ গুলি ছিলো প্রশংসনীয় এমন মত ব্যক্ত করে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাস্ট্রপক্ষের কৌসুলি অ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী বলেন, ‘নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা ২০০৮র ১১/১৮ লঙ্ঘন জনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির ৬মাসের কারাদণ্ড অথবা ৫০হাজার টাকা জরিমান বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন’। ৮নং পৌর ওয়ার্ড কান্সিলর শেখ কৌশিক আহমেদ মুঠোফোনে আলাপাকালে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘মামলা হয়েছে জানি, আমি আইনগত ভাবে মামলা মোকাবিলা করব’।