কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আবাসিক হলে ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা দ্বারা বিবস্ত্র করে রাতভর ফুলপরী নামে নবীন ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পৃথক সাক্ষাৎকার নিয়েছে আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।

অভিযুক্তদের ডেকেছে তদন্ত কমিটি, সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট রুমে ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুনকে উপস্থিত করে তদন্তের স্বার্থে মুখোমুখি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায়, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আবাসিক হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে ফুলপরীর সাথে কথা বলার জন্য প্রভোস্ট রুমে তাঁকে উপস্থিত করা হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটিও ভুক্তভোগী ছাত্রীর সাথে একই রুমে কথা বলে। দুইটি তদন্ত কমিটি পৃথকভাবে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা কথা বলেন।
এদিকে নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কার্যের জন্য উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে প্রশাসন। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তরের উপরেজিস্ট্রার রাশিদুজ্জামান খান টুটুলের এক বার্তায় এ তথ্য জানা যায়। বার্তাতে তিনি জানান, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে দু’জন শিক্ষার্থী মোছাঃ ফুলপরী খাতুন (নির্যাতিত ছাত্রী) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ ২০২১-২০২২ এবং সানজিদা চৌধুরী অন্তরা পরিসংখ্যান বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ ২০১৭-২০১৮ এর নিকট থেকে প্রাপ্ত দুটি অভিযোগ পত্র বিবেচনায় এনে এবং ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে আনুমানিক রাত ১১ টা থেকে রাত ৩.৩০ মিনিট পর্যন্ত উদ্ভুত পরিস্থিতি বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে একটি গণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। উক্ত বিষয়ে কারোর নিকট কোনো তথ্য প্রমাণাদি থাকলে তা লিখিত আকারে/সশরীরে আইন বিভাগের সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডলের অফিসে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারী সকাল ১১টার মধ্যে জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে।
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফুলপরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পর থেকে আমি সম্পূর্ণ নিরাপদ। তদন্ত কমিটি আমার থেকে ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত বর্ণনা লিখিত আকারে নিয়েছে। হলে সেদিন রাতে যেখানে যা হয়েছে তা তারা ঘুরে দেখেছে। আমি প্রত্যাশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্তদের কঠোর বিচারের মুখোমুখি করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানান, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি তদন্ত কমিটির সাথে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কথা হয়েছে। তদন্ত কমিটি তাঁদের কাজ করেছে। আমি তার অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আমি তার পরিবারকে আশ্বস্ত করেছি। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটির ডাকে দুপুরে ক্যাম্পাসে আসেন ফুলপরী। তদন্তের কাজ শেষে বিকাল সাড়ে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে তাকে ক্যাম্পাস থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে এক নবীন ছাত্রীকে ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগীর দ্বারা নির্যাতনের ঘটনায় তদন্তের জন্য এবার অভিযুক্তদের ডেকেছে তদন্ত কমিটি। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, তাবাসসুমসহ অন্যান্যদের ডাকা হয়েছে। সশরীরে উপস্থিত হয়ে তারা কমিটির কাছে জবানবন্দি দিবেন। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন ও গণরুমে থাকা অন্যন্য শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শোনে তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড রেবা মন্ডল বলেন, ‘তদন্তের কাজে অনেকদূর এগিয়েছি। ঘটনাস্থলসহ চার জায়গায় সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। ভুক্তভোগী ও গণরুমের মেয়েদের বক্তব্য শুনেছি। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ টায় তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের ডাকা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনার তদন্তের সহায়ক হিসেবে থাকা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সেদিন রাতে কি ঘটেছিলো সেটার তথ্য সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সে ফুটেজ মিলছেনা। হলসূত্রে জানা যায়, গণরুমের ভেতরের দিকে কোনো সিসিটিভি ফুটেজ নেই। নিরাপত্তার খাতিরে ছাত্রীদের রুম গুলোর বাইরে এবং অফিস এর আশেপাশে সিসিটিভি ফুটেজ দেয়া হয়েছে। তবে ডাইনিং এর পাশে একটি সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর ভাষ্যনুযায়ী সেদিন তাকে ডাইনিং এ নিয়ে এসেও নির্যাতন করা হয়। সেক্ষেত্রে ডাইনিংয়ের পাশের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলে হয়তো কোনো তথ্য পাওয়া যেতে পারতো। তবে এ সিসিটিভিতে সেদিনকার ফুটেজ পাওয়া যায়নি। হল প্রশাসন বলছে টেকনিক্যাল কারণে নাকি ফুটেজ হাতে পায়নি।
ঘটনা তদন্তে হল কমিটির আহবায়ক ও হলের হাউজ টিউটর আহসানুল হক বলেন, ‘ঘটনাস্থলের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। হলের রুমগুলোর বাইরে এবং অফিসের দিকে নিরাপত্তার খাতিরে সিসিটিভি বসানো আছে। তবে ডাইনিংয়ের পাশে একটি সিসিটিভি আছে। টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে তা এখনও হাতে পাইনি। বিষয়টি আইসিটি সেলকে জানিয়েছি।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত প্রায় তিনটা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করা হয় নবীন ওই ছাত্রীকে। ভুক্তভোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা ওই ছাত্রীকে মারধর করে তার বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে রাখে।
১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী ছাত্রী। র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত দেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন অভিযুক্তরা।
