দৌলতপুরে অনলাইনের তথ্য থেকে বঞ্চিত সচেতন মানুষ - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

দৌলতপুরে অনলাইনের তথ্য থেকে বঞ্চিত সচেতন মানুষ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: জুন ১৩, ২০২৩
দৌলতপুরে অনলাইনের তথ্য থেকে বঞ্চিত সচেতন মানুষ

জাতীয় তথ্য বাতায়নের দৌলতপুর উপজেলার ওয়েব পোর্টালের ‘জানালা’ গুলোতে হয় মরিচা ধরে গেছে, নয়তো সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। পোর্টালগুলো অসম্পূর্ণ, ভুল ও হালনাগাদ না হওয়া পুরোনো তথ্যে ভরা। অনেক ক্ষেত্রে মৃত মানুষের নাম ও মোবাইল নম্বরও মুদ্রিত হয়ে আছে। এতে অনলাইন তথ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ।

দৌলতপুরে অনলাইনের তথ্য থেকে বঞ্চিত সচেতন মানুষ

দৌলতপুরে অনলাইনের তথ্য থেকে বঞ্চিত সচেতন মানুষ

দৌলতপুরে অনলাইনের তথ্য থেকে বঞ্চিত সচেতন মানুষ

দেশের জনগণ ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে যাতে ঘরে বসে যাবতীয় সেবা ও তথ্য পায়, সেজন্য সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারি দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সমন্বয়ে জাতীয় তথ্য বাতায়নের আওতায় আলাদা আলাদা ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। যাতে করে দেশের মানুষ ঘরে বসেই নিজ নিজ এলাকার প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা অনলাইনে পেতে পারেন। কিন্তু দৌলতপুরে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও তদারকির অভাবে সরকারি পোর্টালগুলো নিয়মিত হালনাগাদ না করায় সঠিক তথ্য থেকে বঞ্চিত মানুষ।

উপজেলা পর্যায়ের সরকারি ওয়েব পোর্টালে নানা তথ্য বিভ্রাটের কারণে একদিকে নাগরিকরা ভুল তথ্য পাচ্ছেন, অন্যদিকে জাতীয় তথ্য বাতায়নের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। দপ্তরগুলোর উদাসীনতা ও তদারকির অভাবে খোদ বেহাল পোর্টালগুলো দেখে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

google news

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

উপজেলার বিভিন্ন সরকারি ওয়েব পোর্টাল পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, জাতীয় তথ্য বাতায়নের দৌলতপুর উপজেলার সরকারি অফিসগুলোর মধ্যে সাতটি গ্রুপ বা শ্রেণিতে ২৭টি দপ্তরের নাম উল্লেখ রয়েছে। উপজেলার ওয়েব পোর্টালে উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, প্রকল্প, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী যে তথ্যগুলো স্ব-প্রণোদিত হয়ে প্রকাশ করার কথা, পোর্টালগুলোতে অধিকাংশ তথ্যই নেই। যে তথ্য দেওয়া রয়েছে তার বেশিরভাগই অসম্পূর্ণ ও পুরোনো তথ্যে ভরা। দপ্তরের কার্যক্রম, গুরুত্বপূর্ণ নোটিশ, বিভিন্ন সভার কার্যবিবরণী, উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্য, সুবিধাভোগীর তালিকা নেই অধিকাংশ ওয়েব পোর্টালে। প্রায় প্রতিটি দপ্তরে সংশ্লিষ্ট লোকবল থাকলেও সদিচ্ছার অভাবে বছরের পর বছর হালনাগাদ করা হচ্ছে না। ওয়েব পোর্টালগুলো নিয়মিত হালনাগাদ হলে জনগণ অবাধ তথ্যপ্রবাহের কাঙ্ক্ষিত সেবা পেত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা পরিষদের তথ্যে ১৪টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নামের যে তালিকা ও মোবাইল নম্বর দেওয়া রয়েছে তার মধ্যে ৯টির চেয়ারম্যানের নাম ও মোবাইল নম্বর সঠিক নয়। পাঁচ বছর আগের তালিকা প্রদর্শিত হচ্ছে। অফিসগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সেবা দিয়ে থাকে থানা। দৌলতপুর থানা অফিসার ইনচার্জের কার্যালয়ের নামে ওয়েব পোর্টালে অফিসার ইনচার্জ নাসির উদ্দিন ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে শফিকুল ইসলামের নাম রয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় আগে তারা বদলি হয়েছেন।

একই দশা সমাজসেবা কার্যালয়সহ অধিকাংশ পোর্টালে। ডাক্তারের তালিকার প্রথমে রয়েছেন সালেহ আহমেদ ও তাঁর মোবাইল নম্বর। অথচ প্রায় দেড় বছর আগে তিনি মারা গেছেন। দৌলতপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা মিলে দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও পোর্টাল খুঁজে কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি। সব ঘরই ফাঁকা রয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়েব পোর্টালটি এক বছরের বেশি সময় আগে হালনাগাদ করা হলেও এরপর আর করা হয়নি।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হাজার হাজার যুবকের আস্থার দপ্তর হলেও সেখানে যোগাযোগ করতে ভোগান্তির শিকার হতে হয় সেবাগ্রহীতাদের। এক বছর আগে বদলি হওয়া যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার নাম ও মোবাইল নম্বরও ঝুলছে সেখানে।

ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রেরও একই দশা। পিয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তার প্রোফাইলে বাপ্পি বলে একজনের নাম থাকলেও উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন অন্যজন। যেখানে উদ্যোক্তার নিজের প্রোফাইলেই পুরোনো তথ্যে ভরা, সেখানে তিনি কী করে সেবাগ্রহীতাকে ডিজিটাল সেবা দেবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

কলেজশিক্ষক আতিকুজ্জামান বলেন, তথ্য বাতায়ন থেকে দু’জন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছিলেন। পরে জানতে পারেন নম্বরগুলো সাবেক চেয়ারম্যানের। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের তথ্যও হালনাগাদ নেই। ফলে তথ্য নেওয়ার আগ্রহ কমে গেছে।

অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী আশিক বলেন, পোর্টালগুলোয় যে সামান্য তথ্য আপলোড করা আছে তার অধিকাংশই ভুলে ভরা। উপজেলায় দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও সে সম্পর্কে একটি তথ্যও পোর্টালে নেই। ফলে তথ্যভান্ডার এখন তথ্যশূন্য হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার সোহেল রানা বলেন, বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও দপ্তরগুলোর উদাসীনতার কারণেই পোর্টালগুলো হালনাগাদ হয় না। তাছাড়া বারবার পোর্টালগুলোর ধরন পরিবর্তন হওয়ার কারণে অনেক তথ্য হারিয়ে গেছে।

ইউএনও মো. ওবাইদুল্লাহ বলেন, পোর্টালগুলোর তথ্যগুলো হালনাগাদ করার জন্য প্রতিটি দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড ও হালনাগাদ করার জন্য নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কিছু দপ্তরের হালনাগাদ হয়েছে। বাকিগুলোও যেন দ্রুত হালনাগাদ করে সেজন্য মনিটর করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: