অজানা হুমকিতে আতঙ্কিত রাজনীতিবিদ ও সাধারণ জনগণ - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

অজানা হুমকিতে আতঙ্কিত রাজনীতিবিদ ও সাধারণ জনগণ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: ডিসেম্বর ২৪, ২০২৫

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী দেশ ভারতীয় বর্ডার দিয়ে অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির ও সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকলেও কোনভাবেই আটকানো যাচ্ছে না ‘আর্মস পুশ ইন’। আর অবৈধ অস্ত্র ‘পুশ ইনের জেরে রীতিমত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে গান ফায়ার। যা কোনভাবেই সামাল দিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একের পর এক হত্যাকাণ্ডে চরম আতঙ্কিত নাগরিক জীবন। সংগঠিত হচ্ছে চরমপন্থি ও অস্ত্রধারীরা। বাড়ছে গাণিতিক হারে হত্যাকাণ্ড। আন্ডারওয়ার্ল্ড হুমকিতে আতঙ্কিত রাজনীতিবিদ ও সাধারণ জনগণ।

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। পুলিশ, বিজিবিও র‌্যাব অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করলেও অধিকাংশ আগ্নেয়াস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতেই রয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি নিজেরা নিজেরা ক্রসফায়ার ও আততায়ীর হাতে নিহত আন্ডারওয়ার্ল্ড গডফাদারদের অস্ত্রভান্ডারও উদ্ধার হয়নি এখনও। আর বিষয়টিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর আমজনতার অভিমত প্রশাসনের উদাসীনতাই এরজন্য দায়ী। সর্বশেষ খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক শক্তি-এর বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকায় প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ভারতের সীমান্ত পথে আসা অবৈধ অস্ত্র সাতক্ষীরা চিহ্নিত ১১টি ও যশোরের সাতটি পয়েন্ট দিয়ে এবং কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর অঞ্চলের ধর্মদহ, আদাবাড়ীয়া, রামকৃষ্ণপুর,চিলমারী, ফিলিপনগর, মরিচা অঞ্চল গুলো দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ঘটনায় উদ্ধার করা অস্ত্র-গুলির মধ্যে অধিকাংশই এসব সীমান্তপথে আসা। আর অস্ত্রগুলোর বেশির ভাগ ভারতের তৈরি। ‘আর্মস পুশ ইনে’ বিজিবি সীমান্ত এলাকায় নয়টি চৌকিসহ মোট ১৫ চেকপোষ্ট বসিয়ে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েও কোন কিনারা করতে পারছে না। কুষ্টিয়া দৌলতপুর সীমান্তে বসবাসকারী জনৈক ইফাজুল ইসলাম (ছদ্মনাম) বলেন, বিএসএফ লাইন (সুযোগ) দিলেই অস্ত্র গোলাবারুদ, পটকা, গান পাউডার ও ভারতীয় পণ্য আমাদের দেশে ঢুকে।

বিএসএফ দিনে রাতে যখনই লাইন দেবে তখনই এই এলাকার ব্লাকাররা ভারতের অস্ত্র-সরঞ্জাম পাচার করে থাকে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্থল বন্দর বেনাপোল ও ভোমরা হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ পুশ ইনের নিরাপদ রুট। যশোরের বেনাপোল সীমান্তের কমপক্ষে ছয়টি ঘাটকে টার্গেট করে চোরাচালানীরা অস্ত্র গোলাবারুদ ও ভারতীয় পণ্য ঢোকাচ্ছে। আর সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সন্নিকট কলোরোয়া, দেবহাটা ও কালীগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি ঘাট দিয়ে এই অস্ত্র গোলাবারুদ প্রবেশ করে। বিএসএফের গ্রিন সিগন্যালে পুশ ইনের অপেক্ষায় থাকে অস্ত্র চোরাচালান সিন্ডিকেট।

আর মাষ্টার মাইন্ডরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে কলকাটি নাড়ছে পর্দার আড়ালে। খোদ বিভাগীয় শহর খুলনাসহ দক্ষিণ-পাশ্চিমাঞ্চলের অস্ত্র ব্যবসায়ী গডফাদার এবং কিলার মাষ্টার মাইন্ডরা মোটা অংকের টাকার বিনিময় এসব অস্ত্র এক হাত থেকে আরেক হাতে পৌঁছে দিচ্ছে। এসব অস্ত্রের একটি বড় চালান যাচ্ছে সুন্দরবনের বনদস্যুদের হাতে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নিষিদ্ধ ঘোষিত নিউ বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টি এবং জনযুদ্ধ ও বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টির (সর্বহারা) দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির সদস্যরা বিভিন্ন ক্যাডার বাহিনীর সাথে যোগ দিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ড চাঙ্গা করছে। এর সাথে যোগ হয়েছে উঠতি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। সকলের টার্গেট সীমান্ত দিয়ে পুশ ইনে আসা অস্ত্র সংগ্রহ। অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সামনে নির্বাচন। বরাবরের মতই সন্ত্রাসীরা এই মৌসুমকে কাজে লাগায়।

যে কারণে অস্ত্রের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে মাদক। চলছে নীরব টেন্ডারবাজি। সব ক্ষেত্রেই প্রভাব বিস্তার করছে অবৈধ অস্ত্র। খোদ মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় তালিকাভুক্তদের কাছে অস্ত্র রয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের লুটকৃত অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনীরা। এদিকে চলতি বছরের গত ১০ মাসে পুলিশ শুধুমাত্র খুলনা থেকে ৪০টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে তিনটি বিদেশি রিভলভার, ১৪টি বিদেশি পিস্তল, একটি রাইফেল, দুটি কাটা বন্দুক, আটটি পাইপগান, তিনটি ওয়ান শুটার গান রয়েছে। ৪০টি অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হয় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে।তবে সম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র এবং হত্যা মিশনে অংশগ্রহণকারী কিলার কিংবা মূল মাষ্টার মাইন্ড ও বাহিনী প্রধানদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, খুলনায় আন্ডারওয়ার্ল্ডকে নিয়ন্ত্রণ করছে যারা তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন গ্রেনেড বাবু, নুর আজিম, পলাশ, হুমায়ুন ওরফে হুমা, আরমিন ওরফে আলামিন এবং চরমপন্থি থেকে আত্মসমর্পণে বেঁচে থাকা সন্ত্রাসী সজল। সীমান্তে জব্দ হওয়া অস্ত্রের কয়েক গুণ বেশি অস্ত্র দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক অস্ত্রের চোরাচালানে জড়িত সন্ত্রাসী ও চোরাকারবারি চক্র দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অশান্ত করতে বিভিন্ন সীমান্তে অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালান বাড়িয়েছে। তার প্রমাণ হচ্ছে, গত ছয় মাসে উদ্বেগজনকভাবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার বেড়েছে।

আসন্ন নির্বাচনে এসব অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন প্রফেসর এনায়েত আলী বিশ্বাস। তিনি বলেন, সীমান্ত দিয়েও অবৈধ অস্ত্র দেশে আসছে সেই দাবিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করছে। একটা সমাজে যত বেশি অবৈধ অস্ত্র থাকবে, তত বেশি অপরাধের ঝুঁকি থাকবে। বিশেষ করে নির্বাচনী সংঘাত-সহিংসতা, চাঁদাবাজি,আধিপত্য বিস্তারে আমাদের দেশে অবৈধ অস্ত্র বেশি ব্যবহার হয়।