কুষ্টিয়া উজানগ্রামের দুই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাট: আতংকে জনগন

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ সানোয়ার হোসেন মোল্লা ও সাবেক চেয়ারম্যান সাবু বিশ্বাসের নেতৃত্বে দুর্বাচারা,দপের পাড়া ও বরইটুপি, দায়ের পাড়া (নাপিত পাড়া)এলাকায় বেশ কয়েকজন সাধারন জনগনের বাড়িঘর ভাংচুর ও টাকা পয়সা ও স্বর্ণালংকার লুটপাট করেছে তাদের পেটুয়া বাহিনী বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে ওই এলাকার সাধারণ জনগণ তাদের বসতবাড়ি, গরু ছাগল, সহ জান মাল লুটপাটের ভয়ে আতংকের মধ্যে দিন পার করছেন। আর এসব লুটপাট ও বাড়িঘর ভাংচুর করায় কেউ বাঁধা দিতে গেলে তাদের বেধরকভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে এই সিন্ডিকিটের বিরুদ্ধে।

কুষ্টিয়া উজানগ্রামের দুই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাট: আতংকে জনগন

কুষ্টিয়া উজানগ্রামের দুই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাট: আতংকে জনগন
কুষ্টিয়া উজানগ্রামের দুই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাট: আতংকে জনগন

রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩ টার পর উজানগ্রাম ইউনিয়নের দুর্বাচারা,দপের পাড়া,ও বরইটুপি এলাকায় প্রায় ৫ থেকে ৭ জনের বাড়িতে ভাংচুর করে লুটপাট করা হয় এবং মাঝে মাঝেই সুযোগ বুঝে দূর্বৃত্তরা বাড়িঘর ভাংচুর করার জন্য ওৎ পেতে রয়েছে। পরদিন সোমবার দুপুর বেলা উজানগ্রাম বড়ইটুপি পুলপাড়া পশ্চিমপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল জব্বার সেখের ছেলে তাবিবুর রহমান (৫২) মাঠে ধান ক্ষেতে চাষ করতে গেলে তাদে বেজ বাটাম দিয়ে বেধরকভাবে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে হাসপাতালে পাঠায় এই দূর্বৃত্তরা।

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

শুধু তাই নয়, একই পরিবারের ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বাড়িঘর ভাংচুর করে বিপুল পরিমান টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটও করেছে দূর্বৃত্তরা।এছাড়াও কয়েকজনের গরু ও ছাগল লুট করে নিয়ে গেলেও দিনের বেলার ঘটনা সবাই দেখে ফেলার কারনে আবার রাতের বেলা গরু ও ছাগল মালিকের কাছে ফিরিয়েও দিয়েছেন তারা।

অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন মোল্লা ও সাবেক চেয়ারম্যান সাবু বিশ্বাসের পেটুয়া বাহিনী দূর্বাচারা এলাকার মৃত সলিম উদ্দিন বিশ্বাস ছেলে লাভলু (৬০),তারা পদো সেখের ছেলে সাহেব আলী মিস্ত্রি (৫০),রাহাত আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ (৩০),রেন্টু সেখের ছেলে রাকিব (৩০),জামালের ছেলে অপি (২৭),মৃত মফিজ সর্দারের ছেলে ময়না সর্দার (নাপিত) (৫০),সিরা সর্দারের ছেলে আজো নাপিত (৩৭), মৃত মদন মোল্লার ছেলে হবিবর মোল্লা (৪৫),ইদবার সেখের ছেলে রতন সেখ (৩৫),মৃত মতলেব বিশ্বাসের ছেলে মছো ব্যাপারী (৫৫),মছো ব্যাপারীর ছেলে তালেব্বর (৩৫), জাসদ নেতা মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে শৈলগারির শামিম (৩৫),মৃত জোদ আলী মন্ডলের ছেলে জামাত আলী মাস্টার (৪৭), মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে রেজাউল (৩৭),মৃত মহসিন মন্ডলের ছেলে শুভ (৪০),মৃত মনোব্বার মন্ডলের ছেলে নিপু (৪৫),গরোর ছেলে জুয়েল (৩২), পটলের ছেলে কাশেম (৩৫), বদি সেখের ছেলে রুস্তম (৪০),মৃত ময়েন উদ্দিনের ছেলে খোরশেদ (৪০)ও আরশেদ (৪৫), কেরু ঘটকের ছেলে চান্নু (২৮),আতিয়ার মোল্লার ছেলে লিটন (৩৭) ও মিঠু (৩৫),মৃত মনোব্বার মোল্লার ছেলে রহিম মোল্লা(৫০),ও আকমাল মোল্লা (৫৪) এই ভাংচুর ও লুটপাট কান্ড চালাচ্ছে।

এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, উজানগ্রাম বারুইপাড়া এলাকার নেয়াব মন্ডলের ছেলে মোঃ সোহেল মন্ডল(৩৮) এর কাছ থেকে জোরপূর্বক এই তার বউ সালিশমাধ্যম করে ছাড়িয়ে নেয় সানোয়ার মোল্লা ও বিত্তিপাড়া এলাকার প্রফেসর মজিদ।তখন সানোয়ার মোল্লা চেয়ারম্যান ছিলেন না। তিনি শুধু ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন। চাড়িয়ে নেওয়ার সময় এই সোহেলের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকাও নিয়েছিলেন সানোয়ার মোল্লা। এরপর থেকে ওই ছেলের ব্রেনের সমস্যা হয়ে যায়। প্রায়ই সানোয়ার মোল্লার কাছে এই ছেলে টাকা নেওয়ার জন্য যেতেন। তার টাকা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সানোয়ার মোল্লাকে মারার জন্য রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ৩ টার দিকে একটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারতে গেলে স্থানীয় জনগন তাকে আটকে রেখে পুলিশে তুলে দেয়। এরপর থেকেই সানোয়ার মোল্লা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান সাবু বিশ্বাসের সাথে একত্রিত হয়ে এলাকায় তাদের পেটুয়া বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন মানুষের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট শুরু করে দিয়েছে। এসব কর্মকান্ডের পর থেকে এলাকার সাধারন জনগন জানমাল রক্ষায় আতংকের মাঝে দিন পার করছেন।

মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের পরিবারের সদস্য রেহানা আক্তার বলেন, আমরা কিছুই জানি নি। হঠাৎ করে চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন মোল্লার লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করতে শুরু করে। আমি এসব দেখে ঘর তালা মেরে চলে যাচ্ছিলাম এ সময় তারা এসে বলে এই দরজা খোল তালা দিচ্ছিস কেন তালা দিলে কিন্তু ঘরে নিয়ে যাবে বেইজ্জতি করবো নে। তারপর আমি ঘর খোলা রাখি তারা এসে আমাদের বাড়ির পাওয়ার টিলার মেশিন, সিসি ক্যামেরা, টিনের বেড়া সহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তারপর আমার এবং আমার শাশুড়ির ঘরে থাকা দশ ভরি সোনার গহনা ও বাড়িতে থাকা নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা তারা নিয়ে চলে যায়। আমরা পরিবার খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। আমরা প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার চাই।

দপের পাড়া এলাকার আরেকজন নারী বলেন, দুপুরের পর আমার বাড়িতে কেউ ছিলোনা শুধু আমি ছিলাম। হঠাৎ করে চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন মোল্লার লোকজন এসে বাড়িঘর ভাংচুর করতে শুরু করে৷ তখন আমার বাড়িতে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায় তারা। আমার দুইটা গরুও নিয়ে গিয়েছিলো আবার রাতে এসে ফেরত দিয়ে গিয়েছে। আমরা গরীব মানুষ আমাদের এত বড় ক্ষতি করেছে। আমরা প্রশাসনের নিকট এর বিচার চাই।

উজানগ্রাম ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সানোয়ার হোসেন মোল্লার ব্যবহৃত মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দিলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এবিষয়ে কুষ্টিয়া ইবি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আন্নুর জায়েদের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিজেও ঘটনাস্থলে রয়েছি। এখানে পর্যাপ্ত পরিমানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে ঘটনাস্থলে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প মোতায়েন করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment