পদ্মা নদীর তীরবর্তী কুষ্টিয়ায় কুমারখালী জগন্নাথপুর ইউনিয়নের জোতপাড়া কোল ঘেঁষে শুকনা মৌসুমে প্রায় ৫ টি গ্ৰামের শতশত মানুষের যাতায়াতের রাস্তা এবং কৃষকের প্রায় কয়েক হাজার বিঘা কৃষি জমি। শুকনা মৌসুমে এখানে ধান, পাট, সরিষা, সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ করেন দুই পারের কএকশও কৃষক । এ কোলের মাঝ দিয়ে চলাচল করেন জগন্নাথপুর, চর জগন্নাথপুর, হোগলা, চর মহেন্দ্রপুর ও পাশ্ববর্তি পাবনা জেলারও কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ।
কুমারখালী পদ্মানদীর কোলে যাতায়াতের বাঁধ নির্মাণ, দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
এছাড়াও এপথ দিয়েই যাওয়া – আসা করে মাধ্যমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পদ্মার কোলে বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে কাঁদা – মাটিতে পাঁয়ে হেঁটে চলাচল করেন তাঁরা। সেজন্য চলাচলের সুবিধার্থে জগন্নাথপুর – চর জগন্নাথপুর বরাবর মাটি ভরাট করে বাঁধ নির্মাণ করছেন স্থানীয় কৃষক, জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয়রা বলছেন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় যুগযুগ ধরে নানান ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার বিঘা জমির কৃষক ও শতশত মানুষ। তাঁরা মাঠেই ধান কেটে মাড়াই করেন। ভোগান্তি কমাতে তাঁরা কোলে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছেন। সরকারিভাবে সেখানে প্রায় তিন কিলোমিটার পাকা বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ করার দাবি জানান তাঁরা।
তবে স্থানীয় জেলেরা বলছেন, বিস্তীর্ন এলাকাজুড়ে প্রায় ১শ একর জমিতে পদ্মা নদীর কোলে (জলাধার) প্রাকৃতিক মাছের অভয়াশ্রম রয়েছে। প্রশাসনকে প্রতিবছর নির্ধারিত রাজস্ব প্রদানের মাধ্যমে তাঁরা ভোগদখল করেন। সেখানে বাঁধ নির্মাণ করা হলে মাছের অভয়াশ্রমে বিঘ্ন ঘটবে। বাঁধের কাজ বন্ধের জন্য তাঁরা প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।
রোববার (১৪ মে) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মানদীর কোল। কোলঘেঁষে বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে কৃষি জমি। সেখানে ধান, পাট, সবজিসহ নানার ফসল চাষাবাদ করা হয়েছে। কৃষি কৃষকরা পাকা ধান কেটে জমিতেই মাড়াই করছেন। কৃষিজমি ও কোলের মাঝ দিয়ে কয়েক শত মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেই বাঁধের ওপর দিয়ে বস্তা ভরা ধান ও খড় মাথায় করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও নানান শ্রেণিপেশার মানুষ পাঁয়ে হেঁটে চলাচল করছেন।
এসময় হোগলা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, কোলজুড়ে তাঁর তিনবিঘা কৃষি আছে। সেখানে তিনি ধানের চাষ করেছেন। চলাচলের রাস্তা না থাকায় তিনি জমিতেই ধান মাড়াই করে মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর ভাষ্য, জগন্নাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে চর জগন্নাথপুর গ্রাম পর্যন্ত পাকা বাঁধ ও সড়ক নির্মাণ করলে সবাই উপকৃত হবেন।
মিজানুর রহমান হান্নান নামের আরেক কৃষক বলেন, সেখানে দুই – তিন হাজার বিঘা জমিতে ধান, পাট, সবজিসহ নানান ফসলের চাষাবাদ করেন তাঁরা। কিন্তু ফসল ঘরে তোলার মতো রাস্তা নেই সেখানে। পানির সময় নৌকা আর খরার সময় পাঁয়ে চলেন তাঁরা।
পাবনা জেলার কৃষক লিটন হোসেন বলেন, বিলের মধ্যদিয়ে কৃষক, ব্যাপারী, সাধারণ মানুষ, স্কুল – কলেজের ছাত্র – ছাত্রীরা চলাচল করে। রাস্তা না থাকায় সবারই খুব কষ্ট হয়। সরকারের কাছে তিনি রাস্তা নির্মাণের দাবি জানান।
তবে স্থানীয়দের দাবির বিপরীতে কোল এলাকার জেলে সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল বারী বলেন, প্রায় দেড় শতাধিক জেলে প্রতিবছর নির্ধারিত টাকা দিয়ে প্রশাসনের নিকট থেকে ইজারা নিয়ে মাছের চাষাবাদ করে আসছেন। কিন্তু এবছর সাবেক মেম্বর কালাম হোসেন স্থানীয়দের সাথে নিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে জলাশয়ে বাঁধা সৃষ্টি করছে। তিনি বিচার চেয়ে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জেলেদের অভিযোগ অস্বীকার করে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার কালাম হোসেন বলেন, মানুষের চলাচলের জন্য চাঁদা তুলে সবাই মিলে রাস্তা নির্মাণ করছেন তিনি। এতে জেলেদের মাছ চাষে কোনো বাঁধা হবেনা। জনস্বার্থে পদ্মানদীর কোলে প্রায় তিন কিলোমিটার বাঁধ, পাকা সড়ক ও একটি ছোট ব্রিজ নির্মাণ করার দাবি জানান তিনি।
জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লা আল বাকী বাদশা জানান, জলমহল স্থানীয় জেলে সমিতির সদস্যরা ইজারা পেয়েছেন। জলমহালের ওইপারে ( চর জগন্নাথপুর) তাঁর একটি ওর্য়াডের জনগণ রয়েছেন। তাঁদের চলাচলের জন্য সবাই মিলে রাস্তা করা হচ্ছে। এতে জলমহালের কোনো সমস্যা হবেনা।
জানা গেছে, পানি সম্পদের সুরক্ষা ও সংরক্ষন এবং নদী কমিশন আইনের বিধিমতে, প্রাকৃতিক জলাধার, পুকুর খাল বিল দীঘি ঝর্না বা সরকারী প্রজ্ঞাপন দ্বারা চিহ্নিত বন্যা প্রবাহ এলাকা হিসেবে গন্য এমন যে কোন ধরণের জলাশয় ভরাট কিংবা বিঘ্ন সৃষ্টি অপরাধে জড়িত ও দোষীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি-অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে।
কুমারখালী উপজেলা প্রসাশন বিতান কুমার মন্ডল বলেন, জেলেদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসিল্যান্ড ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বর্তমানে বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। তদন্ত স্বাপক্ষে আইনগত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তিনি।