মাশরুম চাষ করে আজ অনুকরণীয় কুমারখালীর সাগর, মাসে আয় লাখ টাকা

মাশরুম বাংলাদেশ অপ্রচলিত হলেও, দিন দিন এর সম্ভবনা ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। যার কারণে এই সাগরের মতো নতুন – নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। মাশরুমে রয়েছে ঔষধি গুণাগুণ, মাশরুম খাদ্য তালিকার অতি প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সহ পুষ্টিতে ভরপুর। এতে দেহের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য উপাদান যেমন -ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেড নেই বললেই চলে। মাশরুম চাষ করে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব এখন।

মাশরুম চাষ করে আজ অনুকরণীয় কুমারখালীর সাগর, মাসে আয় লাখ টাকা

মাশরুম চাষ করে আজ অনুকরণীয় কুমারখালীর সাগর, মাসে আয় লাখ টাকা
মাশরুম চাষ করে আজ অনুকরণীয় কুমারখালীর সাগর, মাসে আয় লাখ টাকা

সাগর (২৫) কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা গ্রামের বাবু প্রামাণিকের ছেলে। তিনি রাজবাড়ী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র।

সাগর বছরে ২২ থেকে ২৪ লাখ টাকার মাশরুম বিক্রি করেন। বেকারত্ব কে জয় করে মাশরুম চাষের জন্য, আজ তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন গোটা জেলা জুড়ে। মাশরুম সাগর হিসেবে তিনি অধিক পরিচিত। টিভিতে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখে মাশরুম চাষে আসা এমনটি জানান সাগর হোসেন।

শুরুর দিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে, অর্থ দিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে সাগরের, সেই সময় অনেক বেশি মূল্যে বীজ কিনেছেন। কেউ মাশরুম চাষে উদ্যোক্তা হতে চাইলে বিনামূল্যে তাদের শেখাবো এবং স্বল্প মূল্যে বীজ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করবো বলে তিনি জানান।

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

মাশরুমের বীজ তৈরি করতে কাঠের গুঁড়া, গমের ছাল, কার্বনেট চুন দিয়ে পানি মিশিয়ে প্যাকেটিং করে মাসখানেক রেখে দিতে হয়। তারপর তৈরি হয় পূর্ণাঙ্গ বীজ। বীজ থেকে মাশরুম প্রক্রিয়াজাত করতে প্রথমে পানি সিদ্ধ করতে হয় ৬০ ডিগ্রি মাত্রায়। এরপর বস্তায় খড় ঢুকিয়ে এই পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয় এক ঘণ্টা। পানি থেকে তুলে সারারাত রেখে পরদিন রোদে হালকা শুকিয়ে প্যাকেট প্রস্তুত করতে হয়। প্যাকেট প্রস্তুত করার সময় একটি প্যাকেটে ৪ স্তর খড়ের মাঝে ৩ স্তর বীজ দিয়ে প্যাকেটের মুখ বন্ধ রাখতে হয়। এর কিছুদিন পর এটিতে ছিদ্র করে দেওয়া হয়। প্রস্তুতের দেড় মাস পর মাশরুম বের হওয়া শুরু হয়।

যে ঘরে মাশরুম প্রস্তুত করা হয় সেই ঘরে প্রতিদিন সকাল-বিকেল পানি দিতে হয়। এতে ঘর ঠান্ডা থাকে। প্যাকেটের চার পাশে বের হওয়া মাশরুম পরিপক্ক হওয়ার পর সকালে পানি দেওয়ার আগে মাশরুম ছিঁড়ে ফেলতে হয়। সকালে ছেঁড়া মাশরুম বিকেলের মধ্যে বিক্রি করতে হয়। এ ছাড়া নির্দিষ্ট সময় শেষে এগুলো চুপসে যায়।

আল্লাহ রহমত মাশরুম সেন্টার ২০০১ সালে মাত্র ১০০ বীজ নিয়ে ছোট্ট একটি কুড়ে ঘরে মাশরুম চাষ শুরু করেন তিনি। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ তিনি একটি অবস্থানে দাঁড়িয়েছেন। সাগরের নিজ গ্রামে সারা ফেলেছে এ চাষ। তিনি তার গ্ৰামকে মাশরুমের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি করাতে চান।

মাশরুম যেমন তাকে বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে তেমনি তাকে করছে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। তার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৫ টি মানুষের কাজের ব্যবস্থা হয়েছে । সাগরের মাশরুম সেন্টারে বাটন, ঋষি (গ্যানডন) ও ওয়েস্টার জাতের মাশরুম তার এখানে চাষ করা হয়। বাটন জাতের মাশরুম প্রতি কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা, ঋষি জাতের মাশরুম ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা কেজি এবং ওয়েস্টার জাতের মাশরুম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি- বিদেশি পদ্ধতির ব্যবহার করে তিনি মাশরুম চাষ করছেন।

আল্লাহ রহমত মাশরুম সেন্টারে গিয়ে কথা হয় সাগরের সাথে তিনি জানান, মাশরুম চাষ করে আমি সাবলম্বী হয়েছি। আমার এলাকায় যারা দরিদ্র ও অসহায় মানুষ আছে , তাদের নিয়ে আরো বড় পরিসরে এই কাজটি করতে চাই। আমার দেখাদেখি এলাকার অনেক বেকার যুবকই মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছেন এ বিষয়ে পরামর্শ নিতে। স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগে মাশরুম চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করার পাশাশপাশি আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। সাগর আরো জানান, প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ড্রিম মাশরুম সেন্টারের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ মানসমৃদ্ধ গবেষণাগার তৈরির পাশাপাশি আরো নতুনভাবে মাশরুম চাষের বিষয়ে কাজ করছি।

মাশরুম চাষ করে আজ অনুকরণীয় কুমারখালীর সাগর, মাসে আয় লাখ টাকা

কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দেবাশীষ কুমার দাস জানান, সাগরের বাড়িতে আমরা একটি প্রদর্শনী করেছি। প্রদর্শনী টি ছোট আকারে ছিল, তিনি ধীরে ধীরে বড় আকারে তৈরি করেছে। বড় সমস্যা হচ্ছে মার্কেট পাওয়া খুব কষ্টকর। সাগর এরই মধ্যে তার বাজার ধরে ফেলেসেন। তিনি বর্তমানে কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীতে মাশরুম বিক্রি করছেন। আমরা চাচ্ছি প্রতিটা গ্ৰামে কে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ করতে। এই প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ ও অনেকেই উদ্বুদ্ধ করছি।

টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ যশোর মনিটরিং ও মুলায়ম অফিসার মাসুম আবদুল্লা এই বিষয়ে জানান, মাশরুম বাংলাদেশে অপ্রচলিত হলেও, দিন দিন এর সম্ভবনা ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। যার কারণে এই সাগরের মতো নতুন – নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। কুষ্টিয়ায় মধ্যে বৃহৎ পরিসরে সাগর মাশরুম চাষ করছে, কুষ্টিয়া সহ বাংলাদেশ বিভিন্ন জায়গায় তার মাশরুম সাপ্লাই হচ্ছে। আর আমাদের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ এর কর্মসূচির আওতায় মাশরুম চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছি। এছাড়াও সাগরের মতো শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা আসছে তাদের সহায়তা জন্য আমাদের প্রকল্প থেকে উদ্যোগ গ্ৰহণ করেছি।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment