মাইক্রোবাস চাপায় সহোদর দুই বোন সহ প্রতিবেশী ৪ শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার খোকসায় মাইক্রোবাসের চাপায় সহোদর দুই বোন সহ একইপাড়ার ৪ শিশু নিহত হয়েছে। একই পরিবারের দুই শিশু সহ পাশাপাশি বাড়ির চার শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে এক শিশু। গতকাল রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টার দিকে কোরআন পড়া শেষে মসজিদ থেকে বাড়ি ফেরার সময় খোকসার শিমুলিয়ায় কুঠিপাড়া এলাকার কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস।

নিহতরা হলেন- কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া মধ্যপাড়ার পালন শেখের মেয়ে মারিয়া খাতুন (১৪), তার ছোটবোন তানজিলা খাতুন (১৩), তাদের প্রতিবেশী হেলাল উদ্দিনের মেয়ে জ্যোতি খাতুন (১০) এবং হানিফ আলীর মেয়ে মিম খাতুন (১১)। এই ঘটনায় ফাতেমা নামের এক শিশু গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সহোদর দুই বোন সহ একইপাড়ার ৪ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় সবাই যেন বাকরুদ্ধ। তাদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের বাড়িতে শোকার্ত স্বজনদের আহাজারি-কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে। নিহত শিশুদের মা-বাবার কান্না কিছুতেই থামছে না।

তাদের এমন মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছে না। বাড়ির উঠানে নিহত শিশু মিমিমের মরদেহের পাশে আহাজারি করছিলেন মা শারমিন খাতুন। স্বজন ও প্রতিবেশী নারীরা ওই মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। একই মহল্লার ৪ শিশুর মৃত্যুতে প্রতিবেশীদের মধ্যেও শোক বইছে। নিহত মিমের মা শারমিন খাতুন আহাজারি করতে করতে বলেন, মাইক্রোবাসের চাপায় আমার সোনা ফুরিয়ে গেল। সোনারা দল বেঁধে পড়তে গিয়েছিল, দল বেঁধেই চারজন মরে গেল। আমার সোনারা দল ধরে মরে গেল। আমার মধুরা আর কাউকে ডাকবে না। চিরদিনের জন্য পৃথিবী থেকে চলে গেল। মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার আগে শেষ ডাকা ডাকছে।

মেয়ে বলেছিল, ‘মা আমি পড়তে গেলাম’। আমার সোনা আর মা বলে ডাকবে না। নিহত মারিয়া ও তানজিলা খাতুনের বাবা পালন শেখ বলেন, সকালে মারিয়া ও তানজিলা মসজিদে আরবি পড়তে গিয়েছিল। পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে একটা বেপরোয়া গতির মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের চাপা দেয়। বেপরোয়া গতির মাইক্রোবাস আমার দুই মেয়ে সহ ৪ শিশুর প্রাণ কেড়ে নিল। মারিয়া ও তানজিলা সহ আমাদের পাড়ার ৫ শিশুকে একসাথে চাপা দেন। চারজনই মারা গেছে। সোনাদের ছাড়া আমিরা কিভাবে বেঁচে থাকব। পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ৭টার দিকে খোকসার শিমুলিয়া গ্রামের কুঠিপাড়া জামে মসজিদে কোরআন পড়া শেষে মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন শিশুরা।

এ সময় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক পার হবার সময় হঠাৎ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে আসা চুয়াডাঙ্গাগামী একটি দ্রুতগামী বেপরোয়া মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের চাপা দিয়ে পাশের পুকুরে উল্টে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মিমের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে খোকসা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মাবিয়া, তার ছোট বোন তানজিলা ও যুথি খাতুন নামের আরও তিন শিশু মারা যায়। এ ঘটনায় আহত অবস্থায় ফাতেমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই দূর্ঘনার প্রতিবাদে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ জনতা।

পরে হাইওয়ে ও থানা পুলিশ যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেন। এবিষয়ে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস জানান, গতকাল রোববার সকাল ৭টার দিকে শিমুলিয়া কুঠিপাড়া জামে মসজিদে কোরআন পড়া শেষে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরছিল। কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি দ্রুতগামী মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের চাপা দিয়ে পাশের পুকুরে উল্টে পড়ে। এতে সহোদর দুই বোন সহ একইপাড়ার ৪ শিশুর মৃত্যু হয়।

কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে আসা চুয়াডাঙ্গাগামী একটি মাইক্রোবাস সকাল ৭টার দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শিশুদের চাপা দেয়। এতে চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে। একজন শিশু গুরুতর আহত হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেছিল বিক্ষুব্ধ জনগণ। বর্তমানে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। গাড়ির চালক পলাতক রয়েছে। নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

Leave a Comment