কুষ্টিয়ায় দিনব্যাপী চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্পে ৭০০ রোগীকে বিনামুল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮০ জনকে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। দিনশেষে তাদের খুলনায় নিয়ে গিয়ে তাদের চক্ষু অপারেশন করা হবে।
কুষ্টিয়ায় দিশা সংস্থার উদ্যোগে ৭০০ জনকে বিনামুল্যে চক্ষু চিকিৎসা

রবিবার (১ অক্টোবর) দিনব্যাপী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের মশান দিশা কমিউনিটি হাসপাতাল প্রাঙ্গনে এ কর্মূসচীর উদ্বোধন করেন বারুইপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মন্টু।
এসময় দিশা সংস্থার যুগ্ম পরিচালক মো: আবদুল ওয়ারেশ, দিশা সমৃদ্ধি কর্মসূচীর প্রকল্প সমন্বয়কারী মো: খাইরুল ইসলাম, বিএনএসবি আই হাসপাতাল খুলনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
দ্যা ফ্রেড হলোস ফাউন্ডেশন ও স্বেচ্ছাসেবী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক কল্যাণ সংস্থা দিশার যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী এ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

মিরপুর উপজেলার গৌঢ়দহ এলাকার ষাটোর্ধ্ব আছিয়া বেগম বলেন, কয়েক বছর ধরে চোখে ঝাপসা দেখি। এখন তো দূরের মানুষ দেখি কিন্তু কে তা চিনতে পারিনা। নাতি-নাতনিদের চিনতে হয় মুখের কথা শুনে। লোকে বলে ভালো ডাক্তার দিয়ে চোখ দেখাতে, তবে টাকা কোথায় পাবো? বড় ডাক্তারকে চোখ দেখাতে সে মেলা টাকা লাগে। গরিব মানুষ আমি। এখানে আমার চোখে দেখিয়ে আমাকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার কথা বললো। বিনামুল্যে আমার চোখ অপারেশন করে দেবে বলে আমার খুব ভালো লাগছে। দিশার মালিকের জন্য অনকে দোয়া রইলো।
ছত্রগাছা এলাকার বয়ষ্ক ব্যাক্তি আব্দুল করিম বলেন, গ্রামের ডাক্তারদের কাছ থেকে ড্রপ কিনি চোখে দেই, একটু ভালো দেখি আবার আগের মতো হয়ে যায়। ভেবেই নিয়েছিলাম যে এভাবেই দিন কাটাতে হবে। পরিষ্কার কিছু আর হয়তো দেখা হবে না। কারণ দুনিয়া দেখার সম্বলই চোখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুনেছি এই দিশা থেকে নাকি খুলনার বড় চোখের হসপিটাল থেকে বড় ডাক্তাররা আসবে তাই সকাল থেকে এসেছি এখানে চোখ দেখাবো। টাকা নেয় না, আবার অপারেশনও নাকি এমনি করে দেয়।
চক্ষুসেবা নিতে আসা পোড়াদহ এলাকার আবু তালেব বিশ্বাস বলেন, আড়াই বছর ধরে চোখে ঝাপসা দেখি। সকালে এখানে এসে বিনামূল্যে চোখ দেখালাম। নানা মেশিন দিয়ে, চোখে লাইট দিয়ে দেখলো। বললো ছানি পড়েছে। খুলনায় নিয়ে গিয়ে অপারেশন করে দেবে। যাতায়াত খরচও এরা দেবে। অপারেশন করলে চোখে আবার হয়তো দেখতে পাবো। এখানকার লোকজন বলেছে যে, সব বিনামূল্যে করে দেবে। মশানের এই দিশা আমাদের গরিব মানুষের জন্য এরা এমন ভালো কাজ করছে। আমাদের গরিব মানুষের কথা যারা ভাবে তাদের আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখুক। এই দিশা সংস্থার মালিককে দীর্ঘ হায়াত দান করুক।
স্থানীয় আব্দুল মজিদ জিয়া বলেন, স্বেচ্ছাসেবী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক কল্যাণ সংস্থা দিশা পরিবারের কাছে এলাকার মানুষ অনেক ঋণী। বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা করতে পারে সাধারণ মানুষরা। দিশার এই মানবিক কার্যক্রম সত্যি মহত কাজ। মাইকিং করে তারা রোগীদের সেবা দেয়। সত্যিই এটা মহত কাজ।
হাজরাহাটি এলাকার রুপিয়া খাতুন বলেন, আমাদের মতো গরিব মানুষের পাশে এসে যারা দাঁড়ায় আল্লাহ তাদের ভালো করবেন। এখান থেকে অনেকের অপারেশন করে চোখ ভালো হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক কল্যাণ সংস্থা দিশার যুগ্ম পরিচালক মো: আব্দুল ওয়ারেশ জানান, রবিবার দিনব্যাপী চলা বিনামুল্যে এই চক্ষু ক্যাম্পে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত ৭০০ জন চক্ষু রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮০ জন রোগীকে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য খুলনার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। বিএনএসবি আই হাসপাতাল খুলনার সহকারী সার্জন ডা: জোবায়ের রিয়াল ও ডা: মো: আসিফ হাসানসহ একটি মেডিকেল টিম চিকিৎসাসেবা দেন।
বিএনএসবি আই হাসপাতাল খুলনার সহকারী সার্জন ডা: জোবায়ের রিয়াল বলেন, এ চক্ষু ক্যাম্পের মাধ্যমে আমরা চক্ষু রোগীদের বিনামুল্যে ব্যবস্থাপনাপত্র দিয়েছি। সেই সঙ্গে যেসব রোগীদের চোখ অপারেশন করা প্রয়োজন তাদের নির্বাচন করেছি। দিনব্যাপী চলা এ ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন দিশা কমিউনিটি হাসপাতালের কর্মী ও সমৃদ্ধি কর্মসূচীর কর্মীরা।